এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের ডিসেম্বর সংস্করণের ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’–এ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৪.৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। তবে কড়াকড়ি আর্থিক নীতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও আশা করছে সংস্থাটি। ফলে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র এক ধরনের মিশ্র পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এডিবির আগের পূর্বাভাসে পরিস্থিতি তুলনামূলক উজ্জ্বল ছিল। ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারা ৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছিল। এমনকি সেপ্টেম্বরের আপডেটেও ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্বল রপ্তানি আয়, বিনিয়োগে ধীরগতি এবং সামনে জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় এই পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে উন্নয়ন ব্যাংকটি।
এডিবি বলছে, রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি, আর এখানেই ধাক্কা সবচেয়ে বড়। বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহব্যবস্থার সমস্যার কারণে রপ্তানি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। বিশেষ করে গত অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মবিরতির প্রভাব বাণিজ্যে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটায়। দেশের মোট আমদানি–রপ্তানির ৯০ শতাংশ যেখান দিয়ে হয়, সেই বন্দরে অচলাবস্থা অর্থনীতিতে সরাসরি আঘাত দিয়েছে।
শুধু রপ্তানি নয়, দেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতাও প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করে এডিবি। ব্যাংকিং–খাতে চাপ, ঋণ পুনরুদ্ধারের দুর্বলতা এবং বাজারের আস্থাহীনতা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তুলছে।
তবে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে তুলনামূলক স্থিতিশীল ছবি দিয়েছে এডিবি। সংস্থাটি বলছে, কড়াকড়ি আর্থিক ও রাজস্ব নীতি বজায় থাকলে এবং টাকার বিনিময়–হারকে স্থিত রাখতে সরকার সফল হলে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশেই স্থির থাকতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার প্রভাবও এতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এডিবি বেশ আশাবাদী। ভারতের শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয় ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কারণে ২০২৫ সালের আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৬.৫ শতাংশ করেছে সংস্থাটি। ২০২৬ সালেও এই হার ৬ শতাংশে স্থির থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিও ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে—ক্রেডিট প্রবাহ বাড়া, অভ্যন্তরীণ ভোগের উন্নতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসায় দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস উন্নত করা হয়েছে।
পাকিস্তানেও কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় দেশটির ২০২৫ সালের পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে। তবে নেপালে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সেপ্টেম্বরের অস্থিরতার কারণে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি।
সব মিলিয়ে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই তুলনামূলক বেশি চাপে রয়েছে—বিশেষ করে দুর্বল রপ্তানি, আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনী অনিশ্চয়তা প্রবৃদ্ধিকে নিচের দিকে টেনে ধরছে। এডিবির বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, অর্থনীতিকে আবার পথের ওপর তুলে আনতে হলে রপ্তানি–মুখী খাত, বিনিয়োগ পরিবেশ এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা এখন সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়ার ক্ষেত্র।

