আগামী শিক্ষাবর্ষে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জারি করা এ নীতিমালায় লটারি পদ্ধতি বহাল রাখার পাশাপাশি আসন বণ্টন, বয়সসীমা, পছন্দক্রম এবং কোটা কাঠামোতে কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারি বহাল-
নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যান্ট্রি (প্রবেশ) শ্রেণিতে এবং আসন শূন্য থাকলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ অনুযায়ী ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নির্ধারিত শিক্ষাবর্ষে স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ১ জানুয়ারি কমপক্ষে ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ৭ বছর হতে হবে।
ভর্তি কার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে পরিচালনা করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আবেদন ফি ও লটারির সময়সূচি নির্ধারণ করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
পাঁচ স্কুল পর্যন্ত পছন্দক্রম-
প্রতিটি শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দক্রমে রাখতে পারবে। তবে যেসব বিদ্যালয় ডাবল শিফটে পরিচালিত, সে ক্ষেত্রে পৃথক শিফট বেছে নিলে দুটি পছন্দক্রম হিসেব হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আবেদনকারীকে পছন্দের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে নিশ্চিত করতে হবে—যা সফটওয়্যারে যুক্ত থাকবে।
ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ৪০ শতাংশ কোটা বহাল-
ঢাকা মহানগরের ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তিনটি গ্রুপে বিভক্ত থাকবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান সর্বোচ্চ তিনটি সংলগ্ন থানা ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে নির্ধারণ করতে পারবেন। এ ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৪০ শতাংশ কোটা।
মোট কোটার পরিমাণ ৬৩ শতাংশ-
গতবারের মতো এবারও প্রবেশ-শ্রেণিতে উল্লেখযোগ্য অংশ কোটা ব্যবস্থার আওতায় থাকছে। সেগুলো হলো:
- ৪০%— ক্যাচমেন্ট এরিয়া
- ৫%— মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
- ২%— বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী
- ১%— শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ০.৫%
- অধীন দপ্তর-সংস্থার জন্য ০.৫%
- ২%— যমজ (আগে ৩% ছিল)
- ৩%— সহোদর (আগে ২% ছিল)
- এ সুবিধা এক দম্পতির সর্বোচ্চ তিন সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
- ১০%— সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস শিক্ষার্থীদের জন্য (ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি)
সব মিলিয়ে ভর্তির ৬৩ শতাংশ আসনই কোটার আওতায় পড়ে।
ভর্তি কমিটি ও দায়িত্ব বণ্টন-
ঢাকা মহানগরে ভর্তি কার্যক্রম তদারকিতে মাউশির মহাপরিচালক, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্ভাব্য সময়সূচি-
মাউশির সাম্প্রতিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—
- ১৯ নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে
- ২১ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন গ্রহণ
- ১৪ ডিসেম্বর ডিজিটাল লটারি হতে পারে
- নির্বাচিতরা ১৭–২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে
সমগ্র নীতিমালার লক্ষ্য-
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল, স্বচ্ছ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করাই এ নীতিমালার প্রধান উদ্দেশ্য। তবে বড় অংশ কোটা ব্যবস্থার আওতায় থাকায় সাধারণ শ্রেণিতে প্রতিযোগিতা আবারো তীব্র হবে বলে অভিভাবকদের অনেকেই মনে করছেন।

