দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ সোমবার থেকে চার দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন। কর্মবিরতির কারণে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আজ বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান গতকালই নোটিশ জারি করে সোমবারের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের নোটিশে আজকের পরীক্ষা না নেওয়ার কথা জানানো হয়। খুলনার সরকারি করোনেশন গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাঁদের পরীক্ষাও স্থগিত হয়েছে। রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে আজ কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি, একই অবস্থা শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়েও।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলমান রয়েছে। সমিতির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজ সকালে বলেন, মন্ত্রণালয় যদি দাবিগুলো বাস্তবায়নের রূপরেখাসহ স্পষ্ট আশ্বাস দেয়, তাহলে তাঁরা শিক্ষার্থী ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
শিক্ষকদের আরেকজন প্রতিনিধি গতকাল বলেন, সরকার দাবি মেনে নিলে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনেও তাঁরা পরীক্ষা নেবেন এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। তবে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষকদের চার দফা দাবি-
- সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’-এর গেজেট প্রকাশ।
- বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন কার্যকর করা।
- সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান।
- ২০১৫ সালের আগের নিয়মে সহকারী শিক্ষকদের অতিরিক্ত ২–৩ ইনক্রিমেন্ট ও অগ্রিম বেতন সুবিধা পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের পেশাগত মর্যাদা এবং বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বিষয়ে সমাধান না হওয়ায় গতকাল রোববারও শিক্ষকরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ থেকে তাঁরা লাগাতার কর্মবিরতিতে গেছেন।
প্রাথমিকে একাংশের কর্মবিরতি অব্যাহত-
এদিকে বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশের শিক্ষক। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে তাঁদের আন্দোলন চলছে এবং দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় আজও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা রয়েছে।
তবে ঢাকার অনেক বিদ্যালয়ে আজ প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। লালবাগ এলাকার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা রয়েছে এবং রাজধানীতে আন্দোলন সাধারণত কম বিস্তৃত হয়।
দেশব্যাপী মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৯টি, যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা এক কোটির বেশি এবং সহকারী শিক্ষক রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। অনুমোদিত সহকারী শিক্ষক পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬ হলেও বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন। জাতীয় বেতন স্কেলে তাঁদের বর্তমান গ্রেড ১৩ (শুরুর বেতন ১১ হাজার টাকা)। বেতন গ্রেড ১০-এ উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবি নিয়ে তাঁরা মাসের শুরুতেই শহীদ মিনারে অবস্থান ও কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন।

