গাজায় দখলদার ইসরায়েলের চলমান রক্তক্ষয়ী হামলার প্রতিবাদ এবার ছড়িয়ে পড়ল সাংস্কৃতিক মঞ্চেও। বিশ্বের বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক ও প্রযোজকরা ঘোষণা দিয়েছেন—ইসরায়েলের চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।
সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান–এ প্রকাশিত সেই অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন দেড় হাজারেরও বেশি শিল্পী। তাদের স্পষ্ট ঘোষণা, “যতদিন গণহত্যা ও বর্ণবাদ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, ততদিন আমরা ইসরায়েলি সরকার-সমর্থিত কোনো চলচ্চিত্র উৎসব, প্রযোজনা সংস্থা কিংবা সিনেমা হলে কাজ করব না, আমাদের ছবি প্রদর্শনেও অনুমতি দেব না।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই বয়কট কোনো ব্যক্তিগত শিল্পীর বিরুদ্ধে নয়। লক্ষ্য কেবল সেই সব প্রতিষ্ঠান, যারা ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় প্রচারণা চালায় বা তাদের নৃশংসতা ঢেকে দিতে সহযোগিতা করে।
তারকাদের দীর্ঘ তালিকা
এই বয়কট আন্দোলনে শামিল হয়েছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী এমা স্টোন, মার্ক রাফালো, অলিভিয়া কোলম্যান, রিজ আহমেদ, টিল্ডা সুইনটন, জেভিয়ার বারডেম, লিলি গ্ল্যাডস্টোনসহ আরও বহু তারকা। নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছেন ইয়র্গোস ল্যান্থিমোস, আভা ডুভার্নে, কেন লোচ, অ্যাডাম ম্যাককে ও জোশুয়া ওপেনহাইমারের মতো খ্যাতিমান পরিচালকরা।
তাদের এই ঘোষণার ফলে জেরুজালেম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, হাইফা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ডোকাভিভ বা তেল আবিব ডকুমেন্টারি ফেস্টিভ্যালের মতো বড় বড় আসরে আর দেখা যাবে না এসব তারকার সিনেমা।
কেন এই সাংস্কৃতিক বিদ্রোহ?
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। হাজারো শিশু অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর মুখে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতসহ বহু মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এই হামলাকে স্পষ্টভাবে “গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই ভয়াবহতার মধ্যেই বিশ্ব তারকারা নীরব না থেকে বেছে নিয়েছেন প্রতিরোধের পথ।
‘ফিল্ম ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামে একটি সংগঠন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে—“যখন বহু সরকার গণহত্যার সহযোগী হয়ে উঠেছে, তখন শিল্পীদের দায়িত্ব এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। ইসরায়েলি সিনেমা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের পাশে দাঁড়ায়নি।”
বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনি
এ প্রথম নয়। এর আগেও ইতালির চলচ্চিত্রকর্মীরা ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বয়কটের ডাক দেন। ব্রিটিশ ও আইরিশ দুই শতাধিক লেখকও ঘোষণা দিয়েছিলেন—গাজায় খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানো না পর্যন্ত ইসরায়েলকে সর্বাত্মক বয়কট করা হবে।
সম্প্রতি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ডকুমেন্টারি দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব—গাজায় নিহত পাঁচ বছরের এক শিশুর হৃদয়বিদারক কাহিনি নিয়ে নির্মিত। ব্র্যাড পিট ও জোয়াকিন ফিনিক্স প্রযোজিত সেই ছবিটি দাঁড়িয়ে অভিবাদন পেয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। আর ঠিক এই মুহূর্তেই যখন ধ্বংসস্তূপ আর ক্ষুধার্ত শিশুর ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন শিল্পীদের সাংস্কৃতিক বিদ্রোহ যেন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।