বলিউডে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন এক তরুণী। জীবনের প্রথম বড় ধাক্কা আসে যখন এয়ার হোস্টেসের চাকরির ইন্টারভিউ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে এই বলে যে তাঁর ‘ব্যক্তিত্ব নেই’।
সংসারের দায়ে কখনো রেস্টুরেন্টে বাসন মাজতে হয়েছে, আবার কখনো সামান্য বেতনে কাজ করতে হয়েছে ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে। সেই তরুণীই পরে হয়ে ওঠেন ভারতের টেলিভিশন জগতের সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া তারকা এবং শেষ পর্যন্ত দেশের মন্ত্রী—তিনি স্মৃতি ইরানি।
১৯৭৬ সালে দিল্লিতে জন্ম স্মৃতি মালহোত্রা নামে। তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। বাবা ছিলেন আধা পাঞ্জাবি ও আধা মহারাষ্ট্রীয়, মা ছিলেন বাঙালি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। বাবা আর্মি ক্লাবের বাইরে বই বিক্রি করতেন আর মা মসলা বিক্রি করতেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে উচ্চশিক্ষা অসমাপ্ত থেকে যায়। সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়তে হয় তাঁকে।

স্মৃতি প্রথম আলোচনায় আসেন মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। যদিও শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছিলেন, কিন্তু তার জন্য ধার করতে হয়েছিল এক লাখ রুপি। এরপর স্বপ্ন দেখেন এয়ার হোস্টেস হওয়ার। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, কারণ বলা হয় তাঁর ‘চেহারায় ব্যক্তিত্ব নেই’।
ব্যর্থতার পর সংসার চালাতে জীবিকার তাগিদে ভারতের প্রথম ম্যাকডোনাল্ডসে ক্লিনারের চাকরি নেন স্মৃতি। মাসিক বেতন ছিল মাত্র ১ হাজার ৮০০ রুপি। জীবনের সেই কঠিন সময়ে স্বপ্ন ছাড়েননি তিনি, অভিনয়ের জন্য একের পর এক অডিশন দিতে থাকেন।
স্মৃতির জীবন বদলে যায় একতা কাপুরের সৌজন্যে। জনপ্রিয় প্রযোজক একতা কাপুরের মা তাঁকে দেখে মন্তব্য করেন, ‘মেয়েটি খুব সুন্দর, টুইঙ্কেল খান্নার মতো।’ সেই মন্তব্যই ভাগ্য বদলের সূত্রপাত। ঝুঁকি নিয়ে একতা তাঁকে সুযোগ দেন টেলিভিশনের ইতিহাস বদলে দেওয়া ধারাবাহিক ‘কিউকি সাস ভি কাভি বহু থি’-তে।
২০০০ সালে সিরিজটির সম্প্রচার শুরু হয় এবং মাত্র তিন মাসের মধ্যে টিআরপি তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। ‘তুলসী বিরানি’ চরিত্রে স্মৃতি ইরানি রাতারাতি ভারতের ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। যেখানে আগে দিনে মাত্র ৬০ রুপির সমপরিমাণ বেতনে কাজ করতেন, সেখানে টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য দিনে ১ হাজার ২০০ রুপি পেতেন। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া টেলিভিশন অভিনেত্রী।

নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্মৃতি বলেন, ‘আমাকে অনেকবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ বলেছে গায়ের রং ভালো নয়, কেউ বলেছে শরীর খুব রোগা। কিন্তু আমি জানতাম, আমার ভেতরে ভিন্ন ধরনের শক্তি আছে।’ সেই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে ধাপে ধাপে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
টেলিভিশনে বিপুল সাফল্যের পর রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন স্মৃতি ইরানি। ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্রুতই পরিচিত হয়ে ওঠেন রাজনৈতিক অঙ্গনেও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান তিনি। অভিনয়ের জনপ্রিয়তা এবং সংগ্রামী জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
স্মৃতি ইরানির জীবনকাহিনি কেবল একজন অভিনেত্রীর নয়, বরং এক নারীর অবিচল সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। দরিদ্র পরিবারে জন্ম, সমাজের তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং পেশাগত প্রত্যাখ্যান তাঁকে ভেঙে দেয়নি। বরং প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাই তাঁকে আরও শক্তিশালী করেছে। এক সময়ের অবহেলিত তরুণীই হয়ে উঠেছেন ভারতের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ।