হরর ঘরানার জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি দ্য কনজুরিং–এর নবম কিস্তি ‘দ্য কনজুরিং: লাস্ট রাইটস’ বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। মাত্র ৫৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬৭০ কোটি টাকা) বাজেটে নির্মিত সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ৪৫৮.২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা)। ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের সব ছবির মতো এই পর্বও ওয়ার্নার ব্রাদার্সের জন্য এক বিশাল সাফল্যের গল্প লিখছে।
২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য কনজুরিং: দ্য ডেভিল মেড মি ডু ইট–এর পর প্রায় চার বছর বিরতির পর আবার পর্দায় এসেছে এই সিরিজের নতুন অধ্যায়। ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাওয়া ছবিটি এখনো চলছে ঢাকার প্রেক্ষাগৃহগুলোতেও।
মাইকেল শ্যাভস পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন প্যাট্রিক উইলসন ও ভেরা ফারমিগা, যারা আগের কিস্তিগুলোর মতোই প্যারানরমাল তদন্তকারী এড ও লরেন ওয়ারেনের ভূমিকায় ফিরেছেন। সহ–অভিনয় করেছেন মিয়া টমলিনসন ও বেন হার্ডি। শ্যাভস আগের ছবির মতোই পরিচালক হিসেবে ফিরে এসেছেন, আর প্রযোজনা করেছেন জেমস ওয়ান ও পিটার সাফরান।

সিনেমাটির গল্প ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ওয়েস্ট পিটস্টনে স্মার্ল পরিবারে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, তাদের বাড়িতে একাধিক শয়তানের উপস্থিতি রয়েছে। ভয়ের সঙ্গে থাকা অদ্ভুত গন্ধ, ভয়ানক আওয়াজ, কালো ছায়া আর শারীরিক আঘাত—সবকিছু মিলিয়ে ঘটনাটি সে সময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। পরে স্মার্ল দম্পতি নিজেদের অভিজ্ঞতা বই আকারেও প্রকাশ করেন।
পরিচালক শ্যাভসের মতে, এই পর্বটি ওয়ারেন দম্পতির তদন্ত জীবনের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। ২০২১ সালে এম্পায়ার–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আশা করি, এই সিরিজ ওয়ারেনদের গল্পকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।”
শুটিংয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা-
অভিনেত্রী ভেরা ফারমিগা জানিয়েছেন, ছবির শুটিং চলাকালে তাঁর শরীরে অজানা কারণে দাগ ও ক্ষতচিহ্ন দেখা দেয়। তাঁর ভাষায়, “প্রতি সিনেমাতেই আমি কিছুটা আঘাত পাই, কিন্তু এবার যেভাবে শরীরে অজানা দাগ পড়েছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি।”

একবার তিনি নিজের পায়ে ক্রস চিহ্নের মতো দাগ দেখতে পান, যা তিনি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারও করেন। আরও একবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তাঁর ঊরুতে নখের আঁচড়ের মতো দাগ—যার কোনো ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই।
শুটিং চলার সময় নাকি চায়ের কাপ নিজে থেকেই তাক থেকে পড়ে যেত, পুরো টিমের রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেত। এমনকি একদিন পরিচালক জেমস ওয়ানের সঙ্গে কথা বলার সময় ভেরার কম্পিউটার স্ক্রিনে হঠাৎ নখের আঁচড়ের মতো চিহ্ন দেখা দেয়—যা পুরো টিমকে আতঙ্কিত করে তোলে।

ব্যবসায়িক সাফল্যে নতুন রেকর্ড-
দর্শকদের গা ছমছমে অভিজ্ঞতা দেওয়ার পাশাপাশি সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবেও অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। মাত্র ৫৫ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত এই সিনেমার আয় ইতোমধ্যেই ৪৫৮ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
ভেরা ফারমিগা ও প্যাট্রিক উইলসনের অনবদ্য রসায়ন দর্শকদের আবারও মুগ্ধ করেছে। ভয় ও আবেগের মিশেলে এই পর্বটি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য এক অনন্য সমাপ্তি তৈরি করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই কিস্তির মাধ্যমে দ্য কনজুরিং সিরিজ থেকে বিদায় নিয়েছেন ভেরা ফারমিগা, যা ভক্তদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে মিশ্র অনুভূতি—ভয়, নস্টালজিয়া ও আবেগের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ।