ভোটের সময় প্রার্থী বা তার কর্মীদের কাজের তালিকায় সময়ের দখল সবচেয়ে কঠিন। একদিকে নির্বাচনী সভা, লিফলেট-বণ্টন আর সাধারণ প্রচারণা, অন্যদিকে প্রতিটি ভোটারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া—সবই সময়ের সঙ্গে দৌড়ে। কিন্তু বর্তমান যুগের বাস্তবতা হচ্ছে, এক মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রার্থী এখন সহজেই কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক দল ও প্রার্থী এই সুযোগ গ্রহণ করবেন। নির্বাচন কমিশনও বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে আচরণবিধিতে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের নিয়ম। বিধি কার্যকর হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই। তবে ইতিমধ্যেই কিছু দল ও প্রার্থী অনলাইনে সক্রিয় হয়ে ভোটারদের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু করেছেন।
ফেসবুকই এখন প্রধান অঙ্গন
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেটা অ্যাড লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের শীর্ষ ২০ পেজের মধ্যে অন্তত ১০টি সরাসরি রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে। এর মধ্যে আটটি পেজ বিএনপি সম্পর্কিত, এবং দুইটি জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কিত।
বিস্তারিত দেখা যায়, ‘Bangladesh Nationalist Party-BNP’ পেজ গত তিন মাসে ৪,৮৮৫ ডলার খরচ করেছে, ‘BNP Media Cell’ ৪,৭২৯ ডলার। ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ পেজ ৪,২১৫ ডলার খরচ করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পেজ ‘Tarique Rahman’ ২,৫৪৭ ডলার ব্যয় করেছে। এছাড়া জেলার প্রার্থী ও স্থানীয় নেতাদের ফেসবুক পেজ থেকেও উল্লেখযোগ্য খরচ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে জামায়াতের ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামানের ভেরিফায়েড পেজ—১২,২৭৪ ডলার।
বিএনপির পৃষ্ঠপোষকরা মনে করেন, অনলাইন প্রচারের মাধ্যমে কম সময়ে বেশি ভোটারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। অফলাইন প্রচারও অনলাইনে তুলে ধরে আরও বিস্তৃত শ্রোতাকে সংযুক্ত করা যায়।
নির্বাচন কমিশনের নতুন আচরণবিধি
নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার প্রথমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিধিতে বলা হয়েছে—প্রার্থী, তার এজেন্ট বা অনুরূপ ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতে পারবে, তবে সমস্ত পরিচয়, পেজের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি ও ইমেইল তথ্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুধু তফসিল ঘোষণার পর থেকে সম্ভব এবং ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য, ধর্মীয় বা জাতিগত অপব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিশেষজ্ঞদের মত
ফেসবুক বিজ্ঞাপন এখন বাংলাদেশের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাঠের রাজনীতির মতো নিউজফিডেও এখন রাজনীতি সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সঠিক নিয়ম মেনে এবং তথ্য যাচাই করে প্রচারণা হলে তা গণতান্ত্রিক আলোচনাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তবে নীতি লঙ্ঘন বা অজানা উৎস থেকে বিজ্ঞাপন পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
ডিজিটালি রাইটের প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী জানালেন, অনেক বিজ্ঞাপন মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে ঠিকমতো প্রদর্শিত হয় না। প্রার্থীর পক্ষে বিজ্ঞাপন দিলে ‘পেইড ফর বাই’ ডিসক্লেইমার দিতে হয়, কিন্তু অনেক সময় তথ্য অসম্পূর্ণ থাকে। তিনি মনে করেন, ইসির নজরদারি প্রয়োজন—প্রচার কতটা স্বচ্ছভাবে হচ্ছে এবং কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে।

