স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ড অঞ্চলে অবস্থিত বিলাচ-না-বা, যা স্থানীয়ভাবে অ্যাপলক্রস পাস নামে পরিচিত, একটি নামকরা পাহাড়ি রাস্তা- যা তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং চ্যালেঞ্জিং পথের জন্য বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এই রাস্তাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,০৫৩ ফুট উচ্চতায় উঠে গেছে, যেখানে রয়েছে খাড়া ঢাল, তীক্ষ্ণ হেয়ারপিন বাঁক এবং সরু একক ট্র্যাক পথ। এই বৈশিষ্ট্যগুলো এটিকে ব্রিটেনের অন্যতম বিপজ্জনক রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে এর দৃশ্যপট এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, এটি পর্যটকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সূত্র: টেলিগ্রাফ

অ্যাপলক্রস পাসের শুরুতে একটি নীল সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে: এই রাস্তায় ১:৫ অনুপাতের খাড়া ঢাল এবং তীক্ষ্ণ হেয়ারপিন বাঁক রয়েছে। নতুন চালক, বড় যানবাহন এবং ক্যারাভান চালকদের এই পথ এড়িয়ে বিকল্প ৭.৫ মাইল দীর্ঘ উপকূলীয় রাস্তা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই রাস্তার সরু পথ এবং অপ্রত্যাশিত বাঁকগুলো অভিজ্ঞ চালকদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। স্থানীয়রা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, অনেক পর্যটক পাসিং প্লেসে অপেক্ষা না করে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান- যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। শীতকালে তুষারপাত এবং বরফ এই রাস্তাকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।
এটি (অ্যাপলক্রস পাস) শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি একটি দৃশ্যমান ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। এই পথে ভ্রমণকারীরা আল্পাইন-শৈলীর পাহাড়, বালির পাথরের গঠন এবং দূরবর্তী সমুদ্র ও দ্বীপের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে, স্কাই দ্বীপপুঞ্জ এবং আউটার হেব্রিডিসের দৃশ্য এই পথকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এই দৃশ্যপট আমেরিকার ইয়োসেমাইট জাতীয় উদ্যানের সঙ্গে তুলনীয় বলে অনেকে মনে করেন।

২০১৫ সালে নর্থ কোস্ট ৫০০ (এনসি৫০০) নামে একটি পর্যটন রুট চালু হওয়ার পর থেকে অ্যাপলক্রস পাসের জনপ্রিয়তা বহুগুণ বেড়েছে। এই ৫১৬ মাইল দীর্ঘ রুটটি স্কটল্যান্ডের উত্তর উপকূলের সবচেয়ে মনোরম স্থানগুলোর মধ্য দিয়ে যায় এবং অ্যাপলক্রস পাস এর অন্যতম আকর্ষণ। এই রুটের জনপ্রিয়তার কারণে হাজার হাজার পর্যটক প্রতি বছর এই পথে ভ্রমণ করেন, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। তবে ভিড় এড়াতে বসন্ত বা শরৎকালে ভ্রমণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভ্রমণের এ স্থান ‘অ্যাপলক্রস পাস’ কেবল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্যও বিখ্যাত। সপ্তম শতাব্দীতে আইরিশ সাধু সেন্ট মায়েল রুবা এই পথ দিয়ে অ্যাপলক্রসে পৌঁছে একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মঠটি তখনকার সময়ে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। আজও অ্যাপলক্রস গ্রামের শান্ত পরিবেশ এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

অ্যাপলক্রস পাসে ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। প্রথমত- চালকদের অবশ্যই স্থানীয় রাস্তার নিয়ম মেনে চলতে হবে, বিশেষ করে পাসিং প্লেসে অপেক্ষা করা এবং অন্য যানবাহনকে পথ দেওয়া। দ্বিতীয়ত- আবহাওয়ার পূর্বাভাস পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শীতকালে এই রাস্তা প্রায়শই বন্ধ থাকে। তৃতীয়ত- গাড়ির যান্ত্রিক অবস্থা ভালো থাকা উচিত, কারণ খাড়া ঢাল এবং তীক্ষ্ণ বাঁকগুলো যানবাহনের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।

এ (অ্যাপলক্রস) গ্রামে পৌঁছে পর্যটকরা স্থানীয় পাব। যেমন অ্যাপলক্রস ইন এবং সামুদ্রিক খাবারের জন্য বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলোতে সময় কাটাতে পারেন। এছাড়া গ্রামের কাছাকাছি হাঁটা পথ এবং সমুদ্রতীর পর্যটকদের জন্য অতিরিক্ত আকর্ষণ।

অ্যাপলক্রস পাস শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি একটি অভিযান। এর বিপজ্জনক পথ, মনোরম দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য এটিকে স্কটল্যান্ডের একটি অনন্য গন্তব্যে পরিণত করেছে। তবে এই রাস্তায় ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের প্রস্তুতি এবং সতর্কতা প্রয়োজন। যারা রোমাঞ্চ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য অ্যাপলক্রস পাস একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

