শাবাহিত ভাইরাস চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বিশ্বজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মহামারি রূপ নেওয়ার আগেই তা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানায়, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপগুলোতে নতুনভাবে রোগটির প্রকোপ শুরু হয়েছে। লা রিইউনিয়ন, মায়োত ও মরিশাস দ্বীপে ইতিমধ্যে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছে। এরই মধ্যে লা রিইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দিয়ানা রোহাস আলভারেজ জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে জানান, বিশ্বের অন্তত ১১৯টি দেশের প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ এখন চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দেখা দেয় উচ্চমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতা।

ডা. আলভারেজ আরও জানান, নতুন করে ভাইরাসটি আফ্রিকার মাদাগাস্কার, সোমালিয়া ও কেনিয়ার মতো দেশে ছড়াতে শুরু করেছে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও সংক্রমণের হার বাড়ছে এবং অনেক জায়গায় এটি মহামারির মতো রূপ নিচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ইউরোপেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে ১২টি স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই রোগীরা কোনো প্রাদুর্ভাব-পূর্ব দেশ ভ্রমণ না করেও আক্রান্ত হয়েছেন, অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে মশার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটেছে। গত সপ্তাহে ইতালিতেও এমন একজন স্থানীয় রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

ফ্রান্সে ১ মে থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন রোগীর শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে ভাইরাস বহন করে এনেছেন বলে জানায় ডব্লিউএইচও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এটি মূলত টাইগার মশা বা এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমে ছড়ায়- যে মশা ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাস ছড়ানোর জন্যও পরিচিত। ভাইরাসটির সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, এটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ও ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করছে, ২০০৪-০৫ সালের মতো করে ভাইরাসটি আবার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সে সময় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল, যা প্রথমে ছোট দ্বীপ অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ডব্লিউএইচও বলছে, এই পরিস্থিতিতে যেকোনো গাফিলতি বিশ্বকে আরেকটি ভয়াবহ স্বাস্থ্যসংকটের মুখে ফেলতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন কঠোর সতর্কতা ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ।

