বিশ্বজুড়ে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আগামী ২৫ বছরের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থূলতা, মদ্যপান এবং হেপাটাইটিসের মতো প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) চিকিৎসা বিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই সতর্কতা উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি (জিসিও), যা বিশ্বমানের ক্যানসার পরিসংখ্যান সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য পরিচিত।
গবেষণায় জানানো হয়েছে, বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বে গড়ে ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষ লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমান হারে সংক্রমণ চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৫ লাখ ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে।
প্রাণঘাতী ক্যানসারগুলোর তালিকায় লিভার ক্যানসার বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। গবেষণা বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই রোগে বছরে প্রাণ হারাতে পারেন ১৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
তবে আশার বিষয় হলো- বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি পাঁচটি লিভার ক্যানসারের মধ্যে তিনটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। মদ্যপান, হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ এবং স্থূলতার কারণে যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া- এই তিনটি প্রধান ঝুঁকিই নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
গবেষণায় এমএএসএলডি (MASLD)-অর্থাৎ মেটাবলিক ড্রাইভেন স্টেয়াটো-হেপাটাইটিস-কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা আগে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) নামে পরিচিত ছিল।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালেও লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস বজায় থাকবে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো শিশুকে জন্মের পরপরই টিকা দেওয়া। কিন্তু সাব-সাহারান আফ্রিকা ও অন্যান্য দরিদ্র অঞ্চলে টিকাদানের হার এখনও অত্যন্ত কম।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যদি টিকাদান কার্যক্রমের গতি না বাড়ানো হয়, তবে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত কারণে বিশ্বে মৃত্যু হতে পারে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের।
২০৫০ সাল নাগাদ লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, ২১ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী থাকবে মদ্যপান, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। একই সময়ে স্থূলতার কারণে যকৃতে চর্বি জমে যাওয়ার ঘটনা বেড়ে দাঁড়াবে ১১ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী তুলনায় দুই শতাংশের প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে এখনই বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার মতো অঞ্চলে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। তাঁদের মতে, যকৃতে চর্বি জমা যে লিভার ক্যানসারের একটি বড় ঝুঁকি-এ তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণাটি ভবিষ্যতের একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্যসংকটের পূর্বাভাস দিলেও সঙ্গে করণীয় দিকগুলোও স্পষ্ট করে দিয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় টিকাদান কর্মসূচি জোরদার, সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে এই সংকট অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা।

