—পাকিস্তান কিসান ইত্তেহাদ (পিকেআই) অনুসারে কৃষিখাতের এক ভয়াবহ চিত্র:
কৃষিখাতের এক ভয়াবহ চিত্রে দেখা যায়- যেখানে অবহেলা, উৎপাদন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি এবং নীতির দুর্বল বাস্তবায়নকে দায়ী করা হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে পিকেআই নেতারা বলেছেন, এই সবকিছু মিলিয়ে কৃষকদের সামনে নজিরবিহীন আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ধান, ভুট্টা ও আমের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও বড় ধস নেমেছে।
তারা সতর্ক করেছেন, গমের পরবর্তী মৌসুমে সম্ভাব্য ঘাটতির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে- যার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে তারা সহায়তামূলক মূল্য ব্যবস্থার (সাপোর্ট প্রাইস) বিলোপকে চিহ্নিত করেছেন।

এছাড়া তারা গ্রামীণ দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। পিকেআই-এর বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়েছে যে, কৃষিখাত এখন এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে- যদিও এই সংগঠনের বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত বলে কেউ কেউ দাবি করতে পারেন এবং নীতিনির্ধারকরা এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।
সরকার কিছু হস্তক্ষেপ করলেও খাতটি এখনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে- যেমন পানির সংকট, নিম্ন উৎপাদনশীলতা, দুর্বল অবকাঠামো, যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, উৎপাদন ব্যয়ের উচ্চতা, নিম্নমানের বীজ, অনিয়ন্ত্রিত বাজার এবং নীতিনির্ধারণে ত্রুটি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা- যেমন অনিয়মিত বর্ষা ও তাপপ্রবাহ- গত দুই দশকে এসব সংকট আরো প্রকট করে তুলেছে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, গত ১৫ বছরের তথ্য অনুযায়ী কৃষি খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে শিল্প ও সেবা খাতের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
প্রধান কৃষিজ ফসলগুলো- গম, তুলা, ভুট্টা, আখ এবং ধান- বেশি সম্পদ গ্রহণ করলেও বছরে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ শতাংশের একটু বেশি। ফলমূল ও শাকসবজির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। কৃষি খাতে সাম্প্রতিক সময়ে একমাত্র গবাদিপশু পালনই কিছুটা প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছে।

পিকেআই ফসল উৎপাদনে ২৫ শতাংশ গ্যারান্টিকৃত লাভ নিশ্চিতকরণ, সেচে বিদ্যুতের খরচ কমানো এবং প্রধান ফসল ও সবজির ন্যায্য বাজারমূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে, যাতে কৃষকদের সহায়তা করা যায় এবং উৎপাদন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। তবে এসব দাবির মধ্যে এক ধরনের ভর্তুকিনির্ভর মানসিকতা লক্ষ করা যায়।
কৃষির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে ঐতিহ্যবাহী সরকারনির্ভর মডেল থেকে সরে গিয়ে বেসরকারি খাতনির্ভর এবং প্রযুক্তিনির্ভর মডেল গড়ে তুলতে হবে, যাতে এটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। সরকারের উচিত স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজের পরিবর্তে কাঠামোগত সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া, যাতে কৃষি উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বাড়ে।
নীতি প্রণয়নে লক্ষ্য হওয়া উচিত: গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, বাজারে প্রবেশাধিকার, ফসলের বৈচিত্র্য, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ, যন্ত্রায়ন এবং জলবায়ু-সহনশীল কৃষি চর্চার প্রসার- যাতে কৃষি খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
সূত্র: দ্য ডন

