২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পার্বত্য খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক বাঙালি যুবক গণপিটুনিতে নিহত হন। পরদিন দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালির সংঘর্ষে একটি পাহাড়ি ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। রাতে জেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে দুই পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে অনিক কুমার চাকমাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা পাহাড়ে সাম্প্রতিক সহিংসতার একটি বড় পর্বের অংশ।
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা জানান, পাহাড়ে নিপীড়ন ও সহিংসতা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই, ভূমি কমিশনের কাজ স্থগিত রয়েছে।
২০২৪ সালের ৯ আগস্ট পালিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আদিবাসী মানুষের অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেও পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হামলা, জমি দখল, হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা কমেনি।
কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ জুলাই পর্যন্ত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের ওপর ২৪টি নিপীড়নের ঘটনা ঘটে; যার মধ্যে ৬ জন নারী ধর্ষণ বা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু, বিনা বিচারে আটক, হেনস্থা ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার ৩৪টি ঘটনা ঘটেছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, শহরের দুই পাহাড়ি যুবক নিহতের মামলার তদন্ত চলছে। রাঙামাটির অনিক চাকমা হত্যা মামলায় ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “রাজধানীর বুকে এমন সহিংসতা ভাবিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা করেছিলাম সহিংসতা কমবে কিন্তু হতাশ হয়েছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের পর বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল কম। চাকমা সার্কেলের প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়কে প্রস্তাব দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকলেও সংবিধানে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি সংক্রান্ত সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে বৈঠক করেনি। তারা ইউপিডিএফের সঙ্গে সংলাপ করলেও সমালোচনার পর দ্বিতীয়বার আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘সরকার বৈষম্য নিরসনে গঠিত হলেও বৈষম্য বাড়ছে এবং সংস্কারে আমাদের জায়গা হয়নি।’
পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ে পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র এক বৈঠক হয়েছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় একটি পাঁচ পাতার গ্রাফিতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়, যা নবম ও দশম শ্রেণির বই থেকে সরানো হয়। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামে পাহাড়ি বাঙালিদের সংগঠনের প্রতিবাদের পর ঢাকায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবনের দিকে মিছিল করার সময় ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়, যার ফলে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
এইসব ঘটনায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তারা সরকারের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

