জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে একই দিনে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন-এর সোমবারের (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনব্যাপী উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়াকে পারমাণবিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পর এবার প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।
প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকালের সেশনে বক্তব্য দেবেন। এরপর বিকেলে বক্তব্য রাখবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। একই দিন বিকেলের সেশনে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও।
জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের প্রকাশিত সূচি অনুসারে, মোদির বক্তব্যের পরপরই শেহবাজের বক্তব্য নির্ধারিত হওয়ায় ইসলামাবাদের হাতে দিল্লির অবস্থানের সরাসরি জবাব দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে থাকবেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার এবং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক ফাতেমি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। তবে উচ্চপর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক চলবে ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর। প্রথম দিনে বক্তব্য রাখবে ব্রাজিল, এরপর যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ভাষণ দেবেন জাতিসংঘে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য— “একসাথে ভালো: শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পথে ৮০ বছর ও আরও বেশি”।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদি ও শেহবাজের একের পর এক বক্তব্যে দুই দেশের ভিন্ন অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্ব দেবে, আর পাকিস্তান কাশ্মির ও আঞ্চলিক শান্তিকে প্রধান বিষয় করবে। এক পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন, “কাশ্মির সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান ছাড়া জাতিসংঘের শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি আমাদের অঞ্চলে কখনো পূর্ণ হবে না।”
এবারের অধিবেশনকে সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত কূটনৈতিক মৌসুম হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এ সময়ে গাজার যুদ্ধ, ইউক্রেন সংঘাত এবং ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধের প্রভাব আন্তর্জাতিক পরিসরে জটিলতা বাড়াবে। পাকিস্তানও স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে— দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনা উপেক্ষা করা যাবে না, আর টেকসই শান্তির চাবিকাঠি হলো কাশ্মির।
এ ছাড়া প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ অধিবেশন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্তির আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

