শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টিকে ভারতের জন্য উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়েছে প্রভাবশালী ভারতীয় দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। পত্রিকাটির বুধবার (২৭ আগস্ট) প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়, উভয় দেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী মনোভাব জোরালোভাবে কাজ করছে, যা অতীতের বৈরিতার চেয়েও গভীর আকার ধারণ করতে পারে।
‘ওয়াচ ক্লোজলি: এডিটোরিয়াল অন দ্য শিফট ইন বাইল্যাটারেল রিলেশন্স বিটুইন পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এছাড়া তিনি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকগুলোতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, যা ভারতের দৃষ্টিতে উদ্বেগের কারণ।
সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, ভারতের জন্য সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে দারের বৈঠকগুলো শুধু সরকারি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা ছাত্রনেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। ২০২৬ সালের শুরুর দিকেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, আর তার আগে পাকিস্তানের এ ধরনের সক্রিয় কূটনৈতিক যোগাযোগ নয়াদিল্লিকে উদ্বিগ্ন করছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীরা তার ভারতের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতাকে বারবার সমালোচনা করেছে। সম্পাদকীয় মতে, সেই সমালোচনা থেকেই জনমনে ধীরে ধীরে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে এবং সেটিই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলছে। ফলে নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রকাশ্য সখ্যতা দেখানো দেশটির অভ্যন্তরে ও বাইরেও নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
লেখায় আরো উল্লেখ করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক শক্তি এখনো পর্যন্ত ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও নারীদের ওপর নির্যাতনের দায় এড়িয়ে চলেছে। যদিও বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জন্ম নিয়েছে, তবুও অতীত বিকৃতির ঝুঁকি থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ।

পত্রিকাটি মত দিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন শক্তিগুলো উত্থান ঘটাচ্ছে এবং ভারতের উচিত তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। অতীত ইতিহাসের কারণে দিল্লি কিছু রাজনৈতিক দলের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে থাকলেও বাস্তববাদী রাজনীতি ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা দাবি করছে, ভারতকে ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পথ খুঁজে বের করতে হবে। নরেন্দ্র মোদি ও এস. জয়শঙ্করের নেতৃত্বে দিল্লির নীতি বাস্তববাদকে গুরুত্ব দেয় এবং সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের বাড়তি প্রভাব উপেক্ষা করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।