যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার লাল ইটের মিউটার জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক অনন্য সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত। এখানে মানুষের খুলি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, অস্বাভাবিক রোগে আক্রান্ত মুখমণ্ডলের মোমের ছাঁচ এবং প্রাচীন চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়।
এই জাদুঘরে অনেক বছর ধরে পরিচয়হীন এক ব্যক্তির বিশাল অন্ত্র প্রদর্শিত হতো, যার লেবেলে শুধু আদ্যক্ষর ‘জেডব্লিউ’ লেখা থাকত। সম্প্রতি তাঁর পরিচয় জানা গেছে—জোসেফ উইলিয়ামস। এখন তাঁর জীবনকথা এবং অঙ্গ উভয়ই জাদুঘরে তুলে ধরা হচ্ছে।
মানবদেহের অংশ প্রদর্শনের নৈতিকতা নিয়ে দুই বছর ধরে চলা বিতর্কের পর, মিউটার জাদুঘর নতুন নীতি গ্রহণ করেছে। জ্যেষ্ঠ পরিচালক সারা রে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, প্রদর্শনীটি দাতার গল্প এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসকে সম্মানজনকভাবে উপস্থাপন করুক।” নতুন নিয়ম অনুযায়ী, জাদুঘর শুধুমাত্র জীবনদাতা বা তাঁদের বংশধরের কাছ থেকে সামগ্রী গ্রহণ করবে, যাতে দাতার পরিচয় নিশ্চিত করা যায়।

১৮৬৩ সালে শল্য চিকিৎসক টমাস মিউটারের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার জিনিসপত্র আছে, যার মধ্যে ছয় হাজার জৈব নমুনা। ২০২০ সালে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর একজন রোগী তাঁর পুরানো হৃৎপিণ্ড জাদুঘরে দান করেন, যা ফুটবল আকৃতির কাচের পাত্রে প্রদর্শিত হচ্ছে।
২০২৩ সালে জাদুঘরের নতুন প্রশাসন ‘পোস্টমর্টেম’ প্রকল্প শুরু করে। এটি দুই বছরের জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি, যার লক্ষ্য ছিল সংগ্রহশালার উপাদান পুনর্মূল্যায়ন এবং মানবদেহ প্রদর্শনের নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা। তবে ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইটের ভিডিও মুছে ফেলার কারণে দর্শক ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

দর্শনার্থীরা এখন মিউটার জাদুঘরের দোতলা ভবনের বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায় সিয়ামিজ যমজের মূর্তি, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের টুকরো, এবং খর্বাকৃতির নারী ও বিশাল অন্ত্রের মানুষ উইলিয়ামসের জীবনকথা।
নৃতত্ত্ববিদ ভ্যালেরি ডেলিওন বলেন, “জাদুঘরের প্রদর্শনী মানুষের প্রতি ন্যায় ও সম্মান বজায় রাখে কি না—এটি দর্শকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।” বর্তমানে শনাক্ত করা যায়নি ২.২৯ মিটার লম্বা এক দৈত্যাকৃতির মানবকঙ্কাল। প্রটেক্ট দ্য মিউটারের সদস্যরা মনে করেন, এটি শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রদর্শন করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অ্যাক্রোমেগালির মতো অসুখের প্রভাব বুঝতে পারে।

