৯৪ বছর বয়সী ওয়ারেন বাফেট জীবনকে উপভোগ করেন নিজের মতো করে। প্রতিদিন চলেনও নিজের নিয়মে। এ কারণে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন। ‘ওমাহার জাদুকর’ নামে পরিচিত বাফেটকে বলা হয় বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারী।
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাফেট ৪০ বছর পার হওয়া মানুষদের দিয়েছেন ১০টি সহজ পরামর্শ। যা অনুসরণ করে তিনি নিজেও পেয়েছেন সফলতা এবং মানসিক শান্তি। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো।
১. যা খেয়ে আনন্দ পান, তাই খান
বাফেট নাশতায় খান ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার। সারাদিন খান চেরি কোক এবং পিনাট ব্রিটল। একবার মজা করে বলেছিলেন, ‘ছয় বছরের শিশুদের মৃত্যুহার সবচেয়ে কম। তাই আমি তাদের মতো খাই।’
তিনি বলেন, চল্লিশের পর খাওয়াদাওয়া নিয়ে অপরাধবোধ করবেন না। যা খেলে আনন্দ মেলে, সেটাই খাওয়া উচিত। কারণ, খুশিও একধরনের বিনিয়োগ।
২. টাকা নয়, মূল্য
সম্পর্কে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা বন্ধুত্বে কখনো ভালোবাসাকে অর্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। বাফেটের মতে, ‘শর্তহীন ভালোবাসা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
চল্লিশের পর প্রকৃত সম্পদ হলো মানসিক নিরাপত্তা। ভালোবাসা পেতে হলে আগে নিজেকে এমন মানুষ বানাতে হবে, যাকে ভালোবাসা যায়।
৩. বন্ধুত্বকে অর্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না
বাফেট বলেন, বন্ধুত্ব মূল্যবোধ ও সম্মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, অর্থের ওপর নয়।
৪. বীজ বুনুন, বেচাকেনা নয়
বাফেট ব্যবসা বদলান না, তিনি গাছ লাগান। তাঁর পরামর্শ, ‘অধিকাংশ মানুষের জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো কম খরচের ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করা।’
অর্থাৎ, পুরোনো পদ্ধতিতে ধৈর্য ধরে টাকা বাড়ানো। জটিল কৌশলের চেয়ে প্রয়োজন স্থির মন।
৫. বন্ধু বেছে নিন
বাফেটের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সম্মানের ওপর, চাকচিক্যের ওপর নয়। তিনি বলেন, ‘যাদের মতো হতে চান, তাদের সঙ্গেই থাকুন। ধীরে ধীরে আপনি তাদের মতো হয়ে উঠবেন।’
কারণ চরিত্র ছোঁয়াচে। কার সঙ্গে ওঠাবসা করছেন এবং কী শিখছেন, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৬. একঘেয়েমিকে শিক্ষক বানান
বাফেট দিনে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পড়াশোনা করেন। তাঁর সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ টাকা নয়, মনোযোগ। তিনি বলেন, ‘আমি অফিসে বসে সারা দিন পড়ি।’
ব্যস্ত থাকা কোনো কৃতিত্ব নয়; কৌতূহলী থাকা আসল কৃতিত্ব।
৭. সাধ্যের নিচে থাকুন
বাফেট আজও থাকেন সেই বাড়িতেই, যা কিনেছিলেন ১৯৫৮ সালে ওমাহায়। তিনি বলেন, ‘দশটা বাড়ি কি আমাকে সুখী করবে? সম্পত্তি বেশি হলে একসময় সেটাই নিয়ন্ত্রণ করবে। যত কম চাইবেন, তত কম হারানোর ভয় থাকবে। সরলতা কোনো ত্যাগ নয়, বরং প্রজ্ঞা।’
৮. ‘না’ বলার কৌশল শিখুন
বেশির ভাগ মিটিং, ডিনার, কনফারেন্স—সবই এড়িয়ে চলেন বাফেট। তিনি বলেন, ‘সফল আর খুব সফল মানুষের পার্থক্য হলো, খুব সফল মানুষ প্রায় সবকিছুকে “না” বলে দেন।’
চল্লিশের পর নিজেকে সংজ্ঞায়িত করুন—কী করতে চান এবং কী চান না।
৯. সঠিক মানুষকে সঙ্গী বানান
বাফেট বলেন, তার জীবনের বড় টার্নিং পয়েন্ট হলো জন্ম নেওয়া আর স্ত্রী সুজানকে পাওয়া। সঠিক মানুষকে বিয়ে করা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, ‘জীবনসঙ্গী শুধু সঙ্গী নন, তাঁরা আপনাকেও গড়ে তোলেন।’
১০. প্রতিভার চেয়ে স্বভাব গুরুত্বপূর্ণ
দক্ষতা শেখানো যায়, সততা নয়। বাফেট বলেন, ‘খারাপ মানুষের সঙ্গে কখনো ভালো কিছু হয় না।’
উপদেশ, এমন মানুষের সঙ্গে চলুন, যাঁর কাছে নির্ভয়ে মানিব্যাগ রাখতে পারবেন। কারণ, প্রতিভার চেয়ে বিশ্বাস বেশি টেকসই।
পরিষ্কারভাবে ভাবা
৬৫ বছর ধরে একটি বাসায়ই আছেন বাফেট। ওয়াল স্ট্রিট ছেড়ে ওমাহায় চলে আসা কোনো পালানো নয়। ভৌগোলিক অবস্থান মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। তাই বিশৃঙ্খলার চেয়ে সব সময় স্বচ্ছতাকেই বেছে নিন।