প্রায় এক শতাব্দী আগে বিজ্ঞানীরা ধারণা দেন, ডার্ক ম্যাটার নামে এক অদৃশ্য পদার্থ ছায়াপথগুলোকে ঘিরে রয়েছে এবং তা পুরো মহাবিশ্বে যেন একটি কসমিক ওয়েবের মতো ছড়িয়ে আছে। ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি কেমন, তা কী দিয়ে তৈরি অথবা আদৌ একে বাস্তব পদার্থ হিসেবে ধরা যায় কি না—এসব প্রশ্নের উত্তর এতদিন অজানা ছিল।
নতুন এক গবেষণা দাবি করেছে, বহুদিনের রহস্যময় এই পদার্থের প্রথম সরাসরি প্রমাণ হয়তো পাওয়া গেছে। যদি সত্য হয়, তবে এটি হবে কয়েক দশকের অনুসন্ধানের এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
বিজ্ঞানীদের প্রচলিত অনুমান অনুযায়ী, মহাবিশ্বের মোট উপাদানের প্রায় ২৭ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার। জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটির অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট অধ্যাপক তোমনোরি তোতানি জানিয়েছেন, মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে নির্গত গামা রশ্মিতে এমন একটি নিদর্শন পাওয়া গেছে যা ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব নির্দেশ করতে পারে।
ডার্ক ম্যাটারকে প্রথম আলোচনায় তোলা হয় ১৯৩০-এর দশকে। সুইস জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জুইকি লক্ষ্য করেন, দূরবর্তী ছায়াপথগুলো দৃশ্যমান ভরের তুলনায় অস্বাভাবিক দ্রুত ঘুরছে। এ থেকে ধারণা তৈরি হয়, এমন এক অদৃশ্য পদার্থ আছে যা আলো শোষণ বা বিকিরণ করে না, তবে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী গবেষণাগার, কণা ত্বরক লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার এবং বিভিন্ন মহাকাশ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটারের কণা খুঁজে চলেছেন, কিন্তু সরাসরি প্রমাণ এখনো মেলেনি। একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব অনুযায়ী, ডার্ক ম্যাটার তৈরি উইম্প (WIMPs) নামে ভারী কণা থেকে। দুটি উইম্প একটি অন্যটির সঙ্গে সংঘর্ষে ধ্বংস হলে গামা রশ্মি ও অন্যান্য কণা উৎপন্ন হয়।
তোতানি নাসার ফার্মি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন এক গামা রশ্মির প্যাটার্ন শনাক্ত করেছেন, যা মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে বিস্তৃত ডার্ক ম্যাটার হ্যালোর আকৃতির সঙ্গে মিলে যায়।
তিনি বলেন, এই গামা রশ্মির বৈশিষ্ট্য ডার্ক ম্যাটার থেকে নির্গত বিকিরণ সংক্রান্ত পূর্বাভাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব কসমোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোপার্টিকল ফিজিকসে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
তোতানির পর্যবেক্ষণ সঠিক হলে ডার্ক ম্যাটার এমন মৌলিক কণায় তৈরি, যার ভর প্রোটনের তুলনায় প্রায় ৫০০ গুণ বেশি। তবে এই সংকেতের পেছনে অন্য মহাজাগতিক বিকিরণ দায়ী কি না, তা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
তাঁর মতে, মহাবিশ্বের অন্য অঞ্চল, বিশেষত বামন ছায়াপথগুলোতেও একই ধরনের গামা রশ্মি পাওয়া গেলে একে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়া যাবে।
তবে ইউনিভার্সিটি অব সারের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট অধ্যাপক জাস্টিন রিড মনে করেন, বামন ছায়াপথে উল্লেখযোগ্য গামা রশ্মি না পাওয়া তোতানির দাবিকে দুর্বল করে। অপরদিকে ইউসিএলের তাত্ত্বিক অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট অধ্যাপক কিনওয়া উ বলেছেন, দাবি এখনো প্রমাণ-পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে এ গবেষণা ডার্ক ম্যাটার অনুসন্ধানে নতুন গতি এনে দেবে।

