চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। পাকিস্তানে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শুরু থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) দেশটিতে দল পাঠানোর বিষয়ে অনীহা দেখিয়ে আসছে। অবশেষে বিসিসিআই নিশ্চিত করেছে, তারা পাকিস্তানে খেলতে যাবে না। এর পরিবর্তে তারা হাইব্রিড মডেলের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর্থিক ক্ষতির হুঁশিয়ারি-
পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতার সতর্ক করে দিয়েছেন, ভারতের অনুপস্থিতিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করলে আয়োজক দেশ ও আইসিসি বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। পাকিস্তানের এক টেলিভিশন চ্যানেলে আখতার বলেন, “যদি ভারতকে পাকিস্তানে বা একটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আনতে না পারে, তাহলে আমরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৪৪ কোটি রুপি) হারাব। স্পনসরশিপ থেকে এই রাজস্ব ক্ষতি হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ভারত যদি পাকিস্তানে আসে এবং লাহোরে খেলে, সেটি দুই দেশের জন্যই দারুণ হবে। তারা জিতুক বা হারুক, মাঠের পরিবেশ যা-ই হোক, এটি দুই পক্ষের সম্পর্ক উন্নয়নে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।”
ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত-
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অনিশ্চয়তার মধ্যেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল পাঠানোর অনুমতি দেয়নি তারা। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই টুর্নামেন্টটি আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানে হওয়ার কথা। ভারতীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দলের ওয়াঘা সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মঙ্গলবার সেই অনুমতি বাতিল করে জাতীয় ফেডারেশন।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সরকার এই পদক্ষেপ কৌশলগতভাবে গ্রহণ করেছে। যদি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দলের পাকিস্তান সফর অনুমোদিত হতো, তবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দল পাঠানোর চাপ আরও বেড়ে যেত।
অনড় অবস্থানে বিসিসিআই ও পিসিবি-
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘিরে বিসিসিআই ও পিসিবির মধ্যকার দূরত্ব আরও বাড়ছে। উভয় বোর্ডই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অটল। যেখানে বিসিসিআই পাকিস্তানে খেলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, পিসিবি হাইব্রিড মডেল গ্রহণে অনিচ্ছুক।
বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য এই সংকট বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যদি ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তা শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে না, দুই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এখন দেখার বিষয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন নিয়ে আইসিসি কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ক্রিকেট কূটনীতি কোনো সমাধান আনতে পারে কি না।