হারিস রউফের বলে রিঙ্কু সিংয়ের বাউন্ডারিতে ম্যাচ শেষ হতেই মাঠজুড়ে শুরু হয় ভারতের উল্লাস। তিলক বর্মা ও রিঙ্কু সিংদের ক্ষ্যাপাটে উদযাপন দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। তবে খেলা শেষ হওয়ার পর দুই দলের সৌজন্য বিনিময়ের পর্ব না থাকায় নজর ছিল পুরস্কার বিতরণীতে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠান ঘিরেই তৈরি হয় একের পর এক নাটকীয়তা। শেষ পর্যন্ত ট্রফি ছাড়াই এশিয়া কাপ জয় উদযাপন করে ভারত।
ফাইনাল শেষে দ্রুতই পুরস্কার মঞ্চ প্রস্তুত হয় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ভারতীয় দল মঞ্চের এক পাশে এসে দাঁড়ায়। এ সময় এসিসি চেয়ারম্যান ও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি খালিদ আল জারুনি নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলেন।
প্রায় ৩০ মিনিট পর মাঠে আসে পাকিস্তান দল। এরপর অতিথিরা মঞ্চে উঠলেও পুরস্কার বিতরণী শুরু হচ্ছিল না। দূর থেকে কারণ বোঝা যাচ্ছিল না। পরে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট জানায়, চ্যাম্পিয়ন ভারত মহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে রাজি নয়। তারা চাইছিলেন অন্য কোনো অতিথির কাছ থেকে ট্রফি নিতে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব নেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার সাইমন ডুল। প্রথমে আম্পায়ারদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এরপর রানার্সআপ পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়দের হাতে স্মারক ও প্রাইজমানি তুলে দেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মহসিন নাকভি। তবে পুরস্কার নিতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার সালমান আলি আঘা—রানার্সআপ লেখা প্ল্যাকার্ডটি তিনি হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলেন।
টুর্নামেন্ট সেরা হন অভিষেক শর্মা, ম্যাচ সেরা তিলক বর্মা এবং ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার কুলদীপ যাদব। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নাকভি এবং প্রতিক্রিয়া জানাতেও যান পুরস্কারপ্রাপ্তরা।
সবশেষে যখন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়ার পালা এলো, ঠিক তখনই অতিথিরা মঞ্চ থেকে নেমে দ্রুত মাঠ ছেড়ে চলে যান। ট্রফিও ভেতরে সরিয়ে নেওয়া হয়। সাইমন ডুল ঘোষণা দেন, ভারত আজ ট্রফি নেবে না। অথচ ভারতীয় খেলোয়াড়দের তখনো মঞ্চের পাশে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। হতাশায় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া মঞ্চে বসে পড়েন, পরে যোগ দেন সতীর্থরা। অবশেষে ট্রফি ছাড়াই উদযাপন করেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বলেন, “আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকে এমন ঘটনা কখনো দেখিনি। একটি চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দেওয়া হলো না, এটা দুঃখজনক।” তিনি আরও জানান, নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে চাননি তারা, তবে অন্য অতিথির কাছ থেকে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু এসিসি প্রধান অন্য কাউকে দিয়ে ট্রফি দেওয়ার অনুমতি দেননি।
প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। ১৪৭ রানের লক্ষ্য ২ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জয় পায় ভারত। তবে ম্যাচের উত্তেজনা ছাপিয়ে যায় পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে ঘটে যাওয়া নাটক। খেলা শেষ হওয়ার দীর্ঘ সময় পরও ট্রফি বিতরণ না হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে—এশিয়া কাপের এই বিতর্ক এখানেই শেষ, নাকি নতুন আলোচনার সূচনা হলো।