ফুটবল কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবার খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে পৌঁছেছেন। নতুন তথ্য অনুযায়ী, ৪০ বছর বয়সী এই তারকার মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
রোনালদোর জীবন শুরু হয়েছিল পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপে। ছোটবেলায় তিনি তাঁর মা এবং তিন ভাইবোনের সঙ্গে একটি ছোট বাড়িতে থাকতেন, যেখানে ছাদ থেকে জল পড়ত । তাঁর বাবা, যিনি কিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন এবং মদ্যপান সমস্যা থাকতেন, পরিবারে রোজগার জোগানোয় হিমশিম খেতেন। তার মা রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করে সংসার চালাতেন, এমনকি অনেক সময় পরিবার কিছুদিন খাবার ছাড়াই কাটাতো। এই চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে ফুটবল রোনালদোর জন্য এক প্রেরণা এবং মুক্তির পথ হিসেবে কাজ করেছিল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “বেশিরভাগ সময় আমি নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছি। আমি স্বপ্রেরণায় এগিয়েছি।”
রোনালদোর এই দরিদ্র পটভূমি এবং শৈশবের সংগ্রামই বোঝায় কেন তিনি এত কঠোর পরিশ্রমী এবং আত্মপ্রত্যয়ী। ১৯৮৫ সালে জন্ম নেওয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো দোস সান্তোস আভেইরো—যার নাম তাঁর পিতার প্রিয় অভিনেতা রোনাল্ড রেগানের নামানুসারে রাখা হয়—কীভাবে পর্তুগালের একটি ছোট দ্বীপ থেকে বিশ্ব ফুটবলের শীর্ষে উঠে আসলেন তা একটি দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রার ফল।
আজ মাদেইরা দ্বীপ তাঁর জন্মভূমি হিসেবে গর্বের সঙ্গে ফুটবল ভক্তদের জন্য দর্শনীয় স্থান। দ্বীপের দোকানগুলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জার্সি, হ্যাট, মগ এবং ব্যাকপ্যাক দিয়ে ভর্তি। স্থানীয় বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ব্রোঞ্জের মূর্তি, বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয়েছে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এবং সেখানে আছে CR7 মিউজিয়াম, যেখানে তাঁর ট্রফি প্রদর্শিত হয় এবং ছোট স্বর্ণের জুতো বিক্রি হয়।
ফুটবল ক্যারিয়ারের সময়, ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, রোনাল্ডো সৌদি আরবের আল নাসর ক্লাবের সঙ্গে জুন মাসে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বিলিয়নেয়ার ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। ২০২৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বার্ষিক বেতন দাঁড়িয়েছে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার, সঙ্গে রয়েছে বোনাস এবং ক্লাবের ১৫ শতাংশ শেয়ার। এটি ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়ের রেকর্ড।
রোনাল্ডোর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সময় ২০০২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বেতন উপার্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে নাইকির সঙ্গে দশ বছরব্যাপী চুক্তি, যা প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার বার্ষিক। বিজ্ঞাপনের দিক থেকেও তিনি আর্মানি, ট্যাগ হেউয়ার, ক্যাস্ট্রল, হার্বালাইফ, ক্লিয়ার এবং অ্যামেরিকান ট্যুরিস্টারের মতো ব্র্যান্ডের প্রচার করেছেন, যা প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ডলার তার সম্পদে যোগ করেছে।
এই অর্জনের মাধ্যমে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবদন্তি অ্যাথলেটদের সঙ্গে বিলিয়নেয়ার ক্লাবে যোগ দিলেন—যেখানে রয়েছেন লেব্রন জেমস, টাইগার উডস, রজার ফেডেরার, মাইকেল জর্ডান এবং ম্যাজিক জনসন।
সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে রোনালদো জানিয়েছেন, তিনি এখনই অবসর নেবেন না। “মানুষ, বিশেষ করে আমার পরিবার বলে: ‘এখন থামার সময় হয়েছে। তুমি সব কিছুই অর্জন করেছ। হাজার গোল কেন করছ?’ কিন্তু আমি তাই মনে করি না। আমি এখনো ভালো কিছু সৃষ্টি করছি, আমার ক্লাব এবং জাতীয় দলকে সাহায্য করছি, এবং কেন থামব?” তিনি হাসিমুখে বলেছিলেন।
পর্তুগালের হয়ে খেলতে থাকা এই তারকা কয়েকটি বাকি বছর পুরোপুরি কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শনিবারের বিশ্বকাপ যোগ্যতা ম্যাচে পর্তুগাল আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে।
যাই হোক, রোনালদোর এখন পর্যন্ত নতুন বিলিয়নেয়ার অবস্থার বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।