ফুটবল বিশ্বে নতুন এক অধ্যায় লিখে ফেলল মরক্কো। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আফ্রিকা পেল আরেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন—এই প্রথমবার ফিফা অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখল মরক্কো। চিলির সান্তিয়াগোর বিখ্যাত এস্তাদিও ন্যাসিওনাল স্টেডিয়ামে সোমবার ভোরে তারা ২–০ গোলে হারিয়েছে টুর্নামেন্টের অজেয় দল আর্জেন্টিনাকে।
এই জয়ে মরক্কো শুধু নিজের দেশের নয়, গোটা আফ্রিকা মহাদেশের গর্ব হয়ে উঠেছে। ঘানার পর দ্বিতীয় আফ্রিকান দেশ হিসেবে অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল ‘অ্যাটলাস লায়নস’।
আর্জেন্টিনার লক্ষ্য ছিল সপ্তমবারের মতো ট্রফি জেতা। শুরু থেকেই তারা বল দখলে ছিল আধিপত্যে, কিন্তু গোলের সামনে এসে যেন ছন্দ হারিয়ে ফেলে। বিপরীতে মরক্কো ছিল নিখুঁত পরিকল্পনায় দৃঢ় ও আক্রমণাত্মক। সুযোগ পেলেই প্রতিআক্রমণে আর্জেন্টাইন রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করেছে তারা।
ম্যাচের ১২ মিনিটেই গোল করে লিড নেয় মরক্কো। সেই গোলের কারিগর ইয়াসির জাবিরি—দেশের নতুন নায়ক। প্রথম গোলের ১৭ মিনিট পর আবারও জ্বলে ওঠেন এই উইঙ্গার। দুর্দান্ত দক্ষতায় দ্বিতীয়বার বল জালে জড়িয়ে মরক্কোকে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধ শেষ হয় সেই ব্যবধানেই।
বিরতির পর মরিয়া হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণে মরক্কোর গোলপোস্ট ঘিরে রাখলেও, আফ্রিকার দলের সংগঠিত রক্ষণ আর গোলরক্ষকের অসাধারণ সেভে হতাশই হতে হয় তাদের। শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠজুড়ে শুরু হয় মরক্কোর উৎসব—তাদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি জয়।
ফাইনালের জোড়া গোলসহ টুর্নামেন্টে মোট পাঁচটি গোল করেছেন ইয়াসির জাবিরি। লিওনেল মেসির ভক্ত এই তরুণ যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও গোল্ডেন বুট জিততে পারেননি। তবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ জেতেন ‘সিলভার বল’। টুর্নামেন্টজুড়ে অসাধারণ ফুটবলের প্রদর্শনীতে মরক্কোর আরেক প্রতিভা ওথমান মামা পান আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’।
অন্যদিকে, ফাইনালের আগে পর্যন্ত কোনো গোল না খাওয়া আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সান্তিনো বার্বি পান ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ ট্রফি।
একটা সময় যারা বিশ্বকাপে চমক দিতে পারলেই নিজেদের ভাগ্যবান ভাবত, সেই মরক্কো আজ আফ্রিকার নতুন স্বপ্নের নাম। তারা প্রমাণ করেছে—অধ্যবসায়, পরিকল্পনা আর ঐক্য থাকলে ফুটবলের মানচিত্রে নতুন ইতিহাস লেখা অসম্ভব নয়।

