ফুটবল দুনিয়ায় এক বিতর্ক যেন শেষই হচ্ছে না— লিওনেল মেসি না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কে সেরা? প্রায় ১৫ বছর ধরে এই প্রশ্নই বিভক্ত করেছে গোটা বিশ্বকে। দুজনই নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় আছেন, কিন্তু কে শ্রেষ্ঠ— সেই উত্তর এখনও ঝুলে আছে বাতাসে।
তবে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেকে মেসির চেয়ে এগিয়ে রাখলেন রোনালদো। ইংলিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানের ইউটিউব শো Uncensored with Ronaldo-তে নানা বিতর্কিত প্রশ্নের মুখোমুখি হন এই পর্তুগিজ সুপারস্টার।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে মরগান সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “অনেকে বলে মেসি আপনার চেয়ে ভালো। আপনি কী মনে করেন?”
রোনালদো মুহূর্তেই জবাব দেন আত্মবিশ্বাসের সুরে—
“মেসি আমার চেয়ে ভালো? আমি তা মানি না। আমি এখানে বিনয় দেখাতে আসিনি।”
৪০ বছর বয়সেও রোনালদোর এই আত্মবিশ্বাস অমূলক নয়। প্রায় ৯৫০ গোলের অসাধারণ রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি, জিতেছেন ৫টি ব্যালন ডি’অর, ৫টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্তুগালের হয়ে ইউরো ও নেশন্স লিগ শিরোপা। সর্বোচ্চ ১৪৩ আন্তর্জাতিক গোলের বিশ্বরেকর্ডও তার দখলে।
অন্যদিকে, লিওনেল মেসিও পিছিয়ে নেই। ৩৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন এই জাদুকর দেশের ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খরা ভেঙেছেন ২০২২ সালে। সঙ্গে রয়েছে দুটি কোপা আমেরিকা, একটি ফিনালিসিমা, এবং ক্লাব ফুটবলে অসংখ্য শিরোপা। লা লিগায় সর্বোচ্চ ৪৭৪ গোল ও ৮টি ব্যালন ডি’অর জয়ের মাধ্যমে মেসি নিজেই যেন এক যুগের সংজ্ঞা।
সাক্ষাৎকারে রোনালদো আরও কথা বলেছেন ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গেও— চল্লিশের পর বিয়ের পরিকল্পনা, বিলিয়নিয়ার হওয়া নিয়ে বিতর্ক, এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উপহার দেয়া তার জার্সি নিয়েও। জার্সিটিতে নিজের হাতে লিখেছিলেন— “Play for Peace”, অর্থাৎ শান্তির জন্য খেলো।
এছাড়া আলোচিত হয়েছে জাতীয় দলের সতীর্থ দিয়েগো জোতার শেষকৃত্যে তার অনুপস্থিতির বিষয়টিও। এই প্রসঙ্গে রোনালদো বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে সেই সময় তিনি অংশ নিতে পারেননি, তবে জোটার পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট রয়েছে।
সাক্ষাৎকারের শেষভাগে একবারের জন্যও নিজেকে ছোট করে দেখেননি এই ফুটবল যোদ্ধা। বরং বলেছিলেন—
“আমি মেসিকে সম্মান করি, কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাতে পারি না। ফুটবলে আমার যা কিছু অর্জন, তা নিজ পরিশ্রমের ফল।”
ফুটবল দুনিয়ার এই অনন্ত বিতর্ক হয়তো থামবে না কখনো। কিন্তু রোনালদোর আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে আবারও শোনা গেল সেই চিরচেনা ঘোষণা— সে নয়, আমি-ই সেরা।

