২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আগামী ১১ জুন। প্রথম ম্যাচ খেলবে যৌথ–আয়োজক মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐতিহাসিক আজটেকা স্টেডিয়ামে হবে উদ্বোধনী লড়াই—যে মাঠে ১৯৭০ ও ১৯৮৬ সালের দুইটি স্মরণীয় ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একই দিন আরেক ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়া মুখোমুখি হবে একটি প্লে–অফ বিজয়ী দলের।
এর পরদিন মাঠে নামবে বাকি দুই আয়োজক—যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। তিন আয়োজকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভাগ্যবান বলা যায়। শীর্ষ বাছাই হওয়ায় তুলনামূলক সহজ গ্রুপ পেয়েছে তারা। প্রতিপক্ষ পারাগুয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং একটি প্লে–অফ বিজয়ী দল।
কানাডা যদিও শীর্ষ বাছাই ছিল, কিন্তু তাদের গ্রুপ তুলনামূলক কঠিন। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের মধ্যে রয়েছে ইতালি (প্লে–অফ থেকে এলে), সঙ্গে সুইজারল্যান্ড ও কাতার। এবারের বিশ্বকাপ ৪৮ দলের হওয়ায় ড্র প্রক্রিয়াটি ছিল অনেক জটিল। ভৌগোলিক নিয়ম আর সাব-গ্রুপের নানা শর্তে ড্র অনুষ্ঠানও বেশ নাটকীয় হয়ে উঠেছিল।

চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার শুরু আলজেরিয়ার বিপক্ষে
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে। একই গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রিয়া ও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে আসা জর্ডান।
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের গ্রুপটিও কম আকর্ষণীয় নয়। তাদের প্রতিপক্ষ মরক্কো—যারা ২০২২ সালে সেমিফাইনাল খেলেছিল—সঙ্গে হাইতি ও স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ডের জন্য এটি বিশেষ মুহূর্ত; ১৯৯৮–এর পর এবারই প্রথম তারা বিশ্বকাপের মূল পর্বে।
ফ্রান্স তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে সেনেগালের বিপক্ষে। ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের অবিশ্বাস্য জয়ের সেই স্মৃতি আবারও ফিরে আসবে। গ্রুপে রয়েছে নরওয়ে ও একটি প্লে–অফ বিজয়ী দল।
ইংল্যান্ডের সামনে কঠিন সূচনা—ক্রোয়েশিয়া, যারা ২০১৮–র সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। গ্রুপে আরও আছে পানামা ও ঘানা।
কুরাকাও নামের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে। মাত্র দেড় লক্ষ জনসংখ্যার দেশটি জার্মানি, ইকুয়েডর ও আইভরি কোস্টের সঙ্গে একই গ্রুপে পড়েছে।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্পেন পেয়েছে তুলনামূলক সহজ গ্রুপ—কেপ ভার্দে, সৌদি আরব ও উরুগুয়ে।
নেদারল্যান্ডসের প্রতিপক্ষ জাপান, তিউনিসিয়া ও একটি প্লে–অফ বিজয়ী দল। বেলজিয়ামের সামনে রয়েছে মিসর, ইরান ও নিউজিল্যান্ড। আর পর্তুগাল খেলবে উজবেকিস্তান, কলম্বিয়া ও প্লে–অফ থেকে আসা এক দলের বিরুদ্ধে।
সম্ভাব্য পথ নির্ধারণ: কার সামনে কতটা কঠিন পথ?
গ্রুপ–পর্যায়ের ড্র শেষ হলেও ম্যাচ কোথায় এবং কখন হবে—তা জানার জন্য দলগুলোকে আরও একদিন অপেক্ষা করতে হবে। ফিফা এবার টিভি বাজার ও দর্শকদের সুবিধা মাথায় রেখে ম্যাচসূচি সাজাচ্ছে।
নতুন বাছাই–ব্যবস্থা অনুযায়ী শীর্ষ চার দল—স্পেন, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড—গ্রুপ–পর্বে একে অন্যের মুখোমুখি হবে না, এমনকি সেমিফাইনালের আগে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবুও নকআউট পর্বে সম্ভাব্য কিছু টাইটানিক লড়াই অপেক্ষা করছে।
ফ্রান্স যদিও গ্রুপে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে, কিন্তু নকআউটের পথে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ—জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, তারপর স্পেন। টুর্নামেন্ট জিততে চাইলে টানা তিনটি শক্তিশালী বাধা টপকাতে হতে পারে।
ইংল্যান্ডের পথও কম কঠিন নয়। নকআউটে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকতে পারে মেক্সিকো, ব্রাজিল (যাদের ইংল্যান্ড কখনো বিশ্বকাপে হারাতে পারেনি) এবং আর্জেন্টিনা—১৯৬৬ সালের পর প্রথমবার ফাইনালে পৌঁছাতে চাইলে প্রতিটি ধাপই হবে বড় পরীক্ষা।
মেক্সিকো নিজেদের গ্রুপে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও, দেশে আশাবাদ বেশি—কমপক্ষে ‘৮৬–র মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। কারণ এর পর সাতবার টানা শেষ–১৬ থেকে ছিটকে যাওয়া আর ২০২২–এ গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া—দুটি স্মৃতি এখনও তাজা।
মেক্সিকোর কোচ হাভিয়ের আগুয়েরি বলেন, “কোনো দলই ছোট নয়। আমরা ঢিলেমি করার সুযোগ নেই। ১৫ বছর আগে যে ম্যাচ দিয়ে শুরু করেছিলাম, ঠিক একই ম্যাচ দিয়ে আবার শুরু করতে যাচ্ছি—পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কোচ মরিসিও পোচেত্তিনো বেশ আত্মবিশ্বাসী। “বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজেদের উন্নতি করতে হবে এবং বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই। তবে তার আগে প্রতিটি ম্যাচ কঠিনভাবে নিতে হবে।”
ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা: ইতিহাসে বিরল, সামনে সম্ভাব্য মহামুকাবিলা
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়া নিজেই বড় ঘটনা। অবিশ্বাস্য হলেও, ১০৬ বার দেখা হলেও বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে তারা মুখোমুখি হয়েছে মাত্র একবার—১৯৯০ সালে, যেখানে আর্জেন্টিনা ১–০ গোলে জিতেছিল।
আগামী বছর আবারও সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে—সেমিফাইনালে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ‘দেবী–মহাযুদ্ধ’ দেখার স্বপ্ন এখন থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে ভক্তদের মনে।

