গত বছর ভারত সফরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু গেল বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে জাতীয় দল থেকে দূরে আছেন এক সময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নৌকা প্রতীক নিয়ে মাগুরা–১ আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য হওয়ায় যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশে ফিরে আসতেও সাহস পাচ্ছেন না তিনি। সেই কারণেই এখন বিদেশের বিভিন্ন লিগে খেলেই সময় কাটাচ্ছেন সাকিব।
সম্প্রতি ‘বিয়ার্ড বিফোর উইকেট’ পডকাস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলেছেন তিনি। সাকিব স্পষ্ট জানিয়ে দেন—তিনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেননি। তার ইচ্ছা হলো বাংলাদেশের মাটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ—টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চান। সেই সিরিজ শেষ করেই তিন সংস্করণ থেকে একসঙ্গে বিদায় নেবেন।
তিনি বলেন, “আমি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেইনি। আমার পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে ফিরে একটি টেস্ট, একটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলে অবসর নেওয়া। শুধু একটি সিরিজ খেলেই আমি তিন ফরম্যাট ছাড়তে চাই।”
ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজে ভালো করলে মত বদলাবেন কিনা—এই প্রশ্নে সাকিবের উত্তর ছিল দৃঢ়। “না, একদমই না। একজন প্লেয়ারের নিজের কথায় অটল থাকা জরুরি। আমি ভালো খেলি বা খারাপ খেলি—এতে কিছু বদলাবে না। আমার ইচ্ছা হলো সমর্থকদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়া। যারা এত বছর আমার পাশে থেকেছে, তাদের সামনে একটি হোম সিরিজ খেলেই বিদায় নিতে চাই।”
ব্যাটিং ও বোলিংয়ের মধ্যে কোনটি বেশি উপভোগ করেন—এই প্রশ্নেও সাকিব সৎ উত্তর দেন। বলেন, “ব্যাটিং বেশি উপভোগ করি, কারণ এটা নিয়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে বোলিংয়ে।”
বাংলাদেশে তার ‘স্বাভাবিক জীবন’ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এ বিষয়ে সাকিব জানান, তিনি কখনোই খুব সামাজিক বা অতিরিক্ত বন্ধুবান্ধব পরিবেষ্টিত জীবন চাননি। শৈশব থেকেই বোর্ডিং স্কুল, এরপর ক্রিকেট—সবকিছুই তাকে নিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত করেছে। তার ভাষায়, “অনূর্ধ্ব–১৫ দলে থাকা অবস্থায়ই কোচ বলেছিলেন—জাতীয় দলে খেলতে চাইলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো হবে না, রেস্টুরেন্টে আড্ডা হবে না। তখন থেকেই আমাকে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই আমার জীবনটা সেভাবেই গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে মাগুরায় গেলে আমি পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকতাম। আমাকে সবাই ‘ফয়সাল’ বলে ডাকত। এজন্যই মাগুরাকে এত পছন্দ করি।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকছেন সাকিব। নিজের বর্তমান জীবন নিয়ে তার মন্তব্য, “এখানে চাইলে অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে থাকতে পারি, চাইলে পুরোপুরি একাও থাকতে পারি—এই স্বাধীনতাটা ভালো লাগে।”
বাংলাদেশে ফিরবেন কিনা—এমন প্রশ্নে কোনো দ্বিধা রাখেননি সাকিব। বলেন, “অবশ্যই ফিরব। আমি বাংলাদেশের ছেলে, বাংলাদেশেই ফিরে যাব।”
এক বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা সাকিবকে নিয়ে অনেকেই ধরে নিয়েছেন—বাংলাদেশের জার্সিতে তার শেষ ম্যাচটি হয়তো হয়ে গেছে। তবে এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেই সাকিব জানিয়েছেন—দেশের মাটিতে আরেকবার পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার পরই তিনি আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে চান।
পডকাস্টে তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, ২০২২ সালের ভারত সফরে তিনি প্রথম প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন যে তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়ে গেছে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট থেকে অবসরের কথাও বলেছিলেন, কিন্তু সে সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশে ফিরতে পারেননি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ওয়ানডে থেকেও বিদায় নেওয়ার কথা ভাবছিলেন তিনি। এখন তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা—দেশে ফিরে তিন ফরম্যাটের একটি করে ম্যাচ খেলে ক্যারিয়ারের শেষটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া।
তার ভাষায়, “সমর্থকদের জন্যই এই পরিকল্পনা। যারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে, তাদের কাছেই বিদায় জানাতে চাই।”
রাজনীতি নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন সাকিব। বলেন, “ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বেশির ভাগটাই শেষ। কিন্তু রাজনীতির পথ এখনো বাকি। বাংলাদেশের মানুষ আর মাগুরার জন্য কিছু করতে চাই। এটা অনেক দিনের ইচ্ছা, এখনো আছে। দেখা যাক, আল্লাহ আমাকে কোথায় নিয়ে যান।”

