ফুটবলকে ‘সবার খেলা’ হিসেবে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখিয়েছিল ফিফা। সেই ভাবনা থেকেই ২০২৬ বিশ্বকাপকে বলা হয়েছিল একটি ‘গ্লোবাল উৎসব’। কিন্তু বাস্তবে টিকিটের দামে সেই স্বপ্ন এখন অনেক সমর্থকের কাছেই অধরা হয়ে উঠছে। অতিরিক্ত মূল্য, সঙ্গে ভ্রমণ ও থাকার খরচ—সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ দেখা যেন ধীরে ধীরে ধনীদের বিশেষ আয়োজনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
ফিফা প্রকাশিত নতুন টিকিটমূল্য তালিকা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিটের দাম ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে কম দামের টিকিট যেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা, সেখানে ফাইনালের সবচেয়ে সস্তা ক্যাটাগরির টিকিটের দামই পৌঁছেছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকায়। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে সেই মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১০ লাখ টাকারও বেশি।
এই দাম সবচেয়ে বেশি আঘাত করছে ছোট ও তুলনামূলক দরিদ্র দেশের সমর্থকদের ওপর। উদাহরণ হিসেবে হাইতির কথা বলা যায়। দেশটিতে গড় মাসিক আয় প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হাইতির প্রথম ম্যাচের সবচেয়ে সস্তা টিকিটের দামই প্রায় ২১ হাজার ৫০০ টাকা। তিনটি গ্রুপ ম্যাচের টিকিট কিনতে একজন হাইতিয়ান সমর্থকের খরচ হবে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা, যা তাদের চার মাসের আয়ের চেয়েও বেশি।
একই ধরনের হতাশা ঘানার সমর্থকদের মধ্যেও। ঘানায় গড় মাসিক আয় প্রায় ২৮ হাজার টাকা। একজন ঘানার সমর্থক আক্ষেপ করে বলেন,
“প্রথমবার বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে বসে দেখার স্বপ্নে মানুষ সাড়ে তিন বছর ধরে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছিল। কিন্তু ফিফার নির্ধারিত টিকিটমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের অনেক বাইরে।”
বিশ্বকাপের মতো আয়োজন যেখানে মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, সেখানে টিকিটের এমন দাম প্রশ্ন তুলছে—বিশ্বকাপ কি সত্যিই এখনো সবার জন্য, নাকি কেবল বিত্তবানদের জন্য এক বিলাসী উৎসব?

