বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধনের প্রস্তাবকে ঘিরে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি)-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রস্তাবিত সংশোধনে এসবিসির রাজস্ব ক্ষতি, সরকারি সম্পদের নিরাপত্তা ও বেসরকারি বিমা কোম্পানির সুবিধা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম স্বাক্ষরিত ১৭ দফা সংশোধনী খসড়া ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর থেকেই এসবিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
খসড়ার সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো রাষ্ট্রায়ত্ত এসবিসিতে ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা বাধ্যতামূলক রাখার ধারা শিথিল করা। আগে সরকারি সম্পদের বিমা বাধ্যতামূলকভাবে এসবিসির মাধ্যমে করতে হতো। নতুন প্রস্তাবে সেই বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ায় সরকারি সম্পদের নিয়ন্ত্রণ সীমিত হবে, আর বেসরকারি কোম্পানির সুযোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রস্তাবটি কার্যকর হলে সরকারি সম্পদের বিমা প্রিমিয়াম বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে পুনর্বিমার নামে বিদেশে পাচার হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। এতে এসবিসি বড় ধরনের রাজস্ব হারাবে।
এসবিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, “সরকারি সম্পদ সুরক্ষার চিন্তা থেকে আইনটি করা হয়েছিল। এখন নির্বাচনের আগে এমন গুরুত্বপূর্ণ আইন পরিবর্তন করা উচিত হয়নি।” তিনি অভিযোগ করেন, বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জড়িত এবং সলভেন্সি মার্জিন না থাকায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) এক সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খসড়া প্রস্তাবটি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। তা না হলে বিমা খাত বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলো পুনর্বিমাযোগ্য প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে এসবিসিকে দিতে হয়। নতুন প্রস্তাবে এ ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি সম্পদের বিমা আয় বণ্টনের নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে যদি কোনো দাবি ওঠে, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি কোম্পানিকেই তা পরিশোধ করতে হবে।
এ ছাড়া সরকার ১০০ শতাংশ এসবিসির মাধ্যমে বিমা করানোর বাধ্যবাধকতাও কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করতে পারবে। যেমন পরীক্ষামূলক বিমা প্রকল্প বা বিদেশি অর্থায়নসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানের ক্রেডিট রেটিংযুক্ত বিমাকারী নির্বাচন করা যাবে।
প্রস্তাব প্রকাশের পর এসবিসির কর্মচারীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বেসরকারি খাতের সুবিধা করতে বাধ্যতামূলক পুনর্বিমার ধারা বাদ দেওয়া হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় করপোরেশন দুর্বল হবে ও রাজস্ব হারাবে। তারা ২০১৯ সালের সংশোধনী স্থগিত, নীতি সহায়তা বৃদ্ধি এবং জনবল কাঠামোর পুনর্বিন্যাস দাবি করেছেন।
অন্যদিকে আইডিআরএর পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, এসবিসি একমাত্র পুনর্বিমাকারী হওয়ায় দাবি নিষ্পত্তিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এখনো ২০২০ সালের ফাইল চলছে। বাধ্যতামূলক পুনর্বিমা ঐচ্ছিক করা হলে অচলাবস্থা দূর হবে এবং সরকারি সম্পত্তির সংজ্ঞাও স্পষ্ট হবে।

