মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে আবারও আলোচনায় এসেছে মসজিদুল আকসা। ইসলামের ইতিহাস, বিশ্বাস আর ভবিষ্যতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জড়িয়ে আছে এই পবিত্র স্থানের সঙ্গে। চলুন জেনে নিই মসজিদুল আকসা নিয়ে বিস্তারিত কিছু তথ্য।
জেরুজালেম শহরের কেন্দ্রেই অবস্থিত মসজিদুল আকসা। ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান এটি। মুসলমানদের কাছে একে বলা হয় বায়তুল মুকাদ্দাস।
এই মসজিদ শুধু নামাজের জায়গা নয় বরং ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী। প্রাচীন এই মসজিদ এখনও শান্তি, ঐক্য আর ইসলামী চেতনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রথম দিকে মুসলমানরা নামাজ পড়তেন এই মসজিদের দিকে মুখ করে। এটাই ছিল ইসলামের প্রথম কিবলা।
পরে হিজরতের পর আল্লাহর নির্দেশে কিবলা ঘুরিয়ে দেওয়া হয় কাবা ঘরের দিকে। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ মাস পর্যন্ত মদিনায় থেকেও নবীজি মসজিদুল আকসার দিকে নামাজ পড়েছিলেন।
মসজিদুল আকসা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ। প্রথমটি হলো মসজিদুল হারাম। হাদিসে আছে, এই দুই মসজিদের নির্মাণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল ৪০ বছর।
এই মসজিদের গুরুত্ব শুধু ইতিহাসে নয়। ইসলামী শারীয়তেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে এর ফজিলতের কথা। নবীজি বলেন, তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা উচিত নয়। এই তিনটি হলো মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি আর মসজিদুল আকসা।
আরও বলেন, এই মসজিদে এক রাকাত নামাজ পড়লে এর সওয়াব পাওয়া যায় ৫০০ নামাজের সমান। যেখানে মসজিদে নববিতে এক হাজার আর মসজিদুল হারামে এক লাখ নামাজের সমান সওয়াব হয়।
হাদিসে এসেছে, কেউ যদি বায়তুল মাকদিস থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করে, তবে তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যায়।
মসজিদুল আকসার চারপাশের এলাকাও পবিত্র। আল্লাহ এখানেই পাঠিয়েছেন সবচেয়ে বেশি নবী-রাসুল। অনেক নবী-রাসুলের কবরও রয়েছে এই অঞ্চলেই।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রাতে প্রথমে এসেছিলেন এই মসজিদে। তারপর এখান থেকেই তিনি ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। এই রাতের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে কোরআনের সূরা ইসরায়। এই মসজিদেই নবীজি ইমামতি করেন সব নবীদের নিয়ে। তাঁরা সবাই তাঁর পেছনে নামাজ আদায় করেন।
কিয়ামতের আগের বহু ঘটনা ঘটবে এই স্থানকে ঘিরেই। নবীজি বলেন, মুসলিমরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। ইহুদিরা পাথর আর গাছের আড়ালে লুকাবে। তখন পাথর-গাছ বলবে, হে মুসলিম, আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়ে আছে, তাকে হত্যা করো। শুধু গারকাদ গাছ তা বলবে না। কারণ এটি ইহুদিদের গাছ।
হাদিসে আরও বলা হয়, ইয়াজুজ-মাজুজ এখানে এসে ধ্বংস হবে। তারা একটি পাহাড়ে পৌঁছাবে, যার নাম জাবালে খামার। এটি বায়তুল মাকদিসের পাশেই অবস্থিত। ঈসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা তখন দোয়া করবেন। আল্লাহ তাদের ঘাড়ে এক ধরণের কীট পাঠাবেন। সব ইয়াজুজ-মাজুজ তখন মারা যাবে।
হাদিসে এটাও বলা আছে, কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দান হবে এখানেই। মানুষ এখান থেকেই নিজেদের গন্তব্যে রওনা দেবে।
নবীজি বলেন, ‘তোমরা বায়তুল মাকদিসে এসো, এখানে নামাজ পড়ো।’ এটি কিয়ামতের দিনে হবে হাশরের মাঠ।
মসজিদুল আকসা শুধু ইবাদতের জায়গা নয় বরং এটি মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যতের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই পবিত্র স্থানকে ঘিরে যে আবেগ ছিলো, তা আজও মুসলমানদের হৃদয়ের গভীরে বেঁচে আছে।

