ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান উত্তেজনা ও চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ, বাড়ছে বাজেট
এশিয়ার একাধিক দেশ সামরিক খাতে নিজেদের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াচ্ছে- অস্ত্র সংগ্রহ, গবেষণা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (IISS)-এর বুধবার (২৮ মে) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি, বৈশ্বিক সংঘাত ও ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো এখন উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব বজায় রাখলেও তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো প্রতিরক্ষা খাতে পূর্ণ স্বনির্ভরতা অর্জন।
IISS-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘর্ষ, বিশেষত গাজা পরিস্থিতি ও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা, চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালীর উত্তপ্ত পরিস্থিতি- সব মিলিয়ে নিরাপত্তা হুমকির মাত্রা বেড়েছে। এই বাস্তবতায় প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে ও বিদেশি সহযোগিতার পাশাপাশি নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশগুলো শুধু অস্ত্র আমদানির ওপর নির্ভরশীল না থেকে স্থানীয় উৎপাদনেও নজর দিচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশ- ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম- গত দুই বছরে প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। এর ফলে ওই দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক বাজেট এখন ১ হাজার ৫০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
তবে জিডিপির তুলনায় এই ব্যয়ের পরিমাণ এখনো তুলনামূলকভাবে কম- প্রায় ১.৫ শতাংশ। IISS বলছে, গত এক দশকে এই হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে এই হারও ভবিষ্যতে বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো এখনো আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিদেশি সরঞ্জামের ওপর নির্ভর করছে। সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, স্যাটেলাইট নির্ভর নজরদারি প্রযুক্তি- এসব ক্ষেত্র এখনো আমদানিনির্ভর।
তবে এই চিত্র বদলানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে। দেশগুলো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম তৈরিতে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের পথ খুঁজছে।
চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোট জোরদার করেছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার অংশ। তবে দেশগুলো এখন নিজেরাও সক্ষমতা বাড়াতে চায়, যাতে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের পাশাপাশি নিজস্ব কৌশলগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্ব রাজনীতির অস্থির প্রেক্ষাপটে এশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের এই ঊর্ধ্বগতি সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে যেমন পুনর্গঠিত করছে, তেমনি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা ও সম্ভাব্য উত্তেজনাকেও বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ইস্যুকে ঘিরে উত্তেজনা এশিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। IISS-এর এই প্রতিবেদন সেই বাস্তবতারই একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরেছে।

