মেক্সিকোর আতলাকোমুলকো শহরে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি মালবাহী ট্রেন ধাক্কা দিয়ে দ্বি-তলা যাত্রীবাহী বাসকে প্রায় মাঝখান থেকে কেটে দুই টুকরো করে দেয়। এতে অন্তত ১০ জন নিহত এবং ৪১ জন আহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টার কিছু আগে। রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শিল্পাঞ্চল আতলাকোমুলকোর একটি রেলক্রসিংয়ে ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেছে, বাসটি ভারী যানজটে ধীর গতিতে রেললাইন পার হচ্ছিল। ঠিক তখনই দ্রুতগতির ট্রেন এসে মাঝ বরাবর ধাক্কা মারে এবং বাসটিকে দুই খণ্ডে ভাগ করে ফেলে। সামনের অর্ধেক অংশ রেললাইন ক্রসিংয়ের কাছে থেমে যায়, আর পেছনের অংশ ট্রেনের ধাক্কায় বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে যায়।
চোখে দেখা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই স্থানে কোনো সিগন্যাল লাইট বা গেট দেখা যায়নি। ৩৩ বছর বয়সী মিগুয়েল সানচেজ, যিনি কাছের একটি ফুয়েল স্টেশনে কাজ করেন, বলেন:
“আমরা প্রথমে ট্রেনের হর্ন শুনেছিলাম। তারপর ভয়ংকর শব্দে ধাক্কার আওয়াজ পেলাম। ভেবেছিলাম হয়তো কোনো গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনা হয়েছে। কিন্তু বুঝতেই পারিনি যে এত মানুষের ভরা একটি বাস এর শিকার হবে।”
মেক্সিকো রাজ্যের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী ও তিনজন পুরুষ। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাসটি স্থানীয় যাত্রী পরিবহন সংস্থা হেরাদুরা দে প্লাতা (সিলভার হর্সশু) পরিচালনা করত। দুর্ঘটনায় বাসটির ছাদও ছিঁড়ে গেছে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কানাডাভিত্তিক ট্রেন সংস্থা কানাডিয়ান প্যাসিফিক কানসাস সিটি অব মেক্সিকো দুর্ঘটনা নিশ্চিত করে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
তারা চালকদের সতর্ক করে বলেছে, রেলক্রসিংয়ে অবশ্যই সড়ক চিহ্ন ও সতর্কবার্তা মেনে চলতে হবে।
বাস পরিচালনাকারী সংস্থা হেরাদুরা দে প্লাতা এ ঘটনায় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
সম্প্রতি প্রকাশিত মেক্সিকোর রেল নিয়ন্ত্রণ সংস্থার রিপোর্ট বলছে, কেবল গত বছরই দেশজুড়ে প্রায় ৮০০টি রেলক্রসিং দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬০২।
শুধু গত মাসেই গুয়ানাহুয়াতো রাজ্যে ট্রেন দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। আর ২০১৯ সালে কুয়েরেতারো রাজ্যে একটি মালবাহী ট্রেন যাত্রীবাহী বাসে ধাক্কা দিয়ে নয়জনকে হত্যা করেছিল।
আতলাকোমুলকোর এই দুর্ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল, মেক্সিকোর রেলক্রসিংগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে যে কোনো মুহূর্তে শতাধিক মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। নিহতদের পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছে, আর আহতরা লড়ছেন জীবনের সঙ্গে।