যুক্তরাষ্ট্রের কোনও আগ্রাসন বা সামরিক হামলা ঠেকাতে দেশটি তার সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত অবস্থায় রাখছে বলে জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো। মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থল, আকাশপথ ও নৌপথে সেনা এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা ইউনিটসহ বিভিন্ন ইউনিট ব্যাপকভাবে মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি পুলিশ, মিলিশিয়া এবং সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত বাহিনীগুলোও নিয়োজিত রাখা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন বিমানবাহী রণতরি জেরাল্ড আর ফোর্ডের ক্যারিবীয় অঞ্চলে উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যে এই ঘোষণা এসেছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, ওই রণতরিটি এবং সেখানে মোতায়েনযুক্ত বিমান ও চার হাজারের বেশি নাবিক ক্যারিবীয় সাগরে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশিক্ষণ মহড়া ও অন্যান্য সামরিক কার্যক্রমের নাম করে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। প্রশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে এসব কার্যক্রম ‘অবৈধ মাদক চোরাচালানি প্রতিরোধ’ ও ‘দেশের সুরক্ষা’ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য বলে দাবি করা হয়েছে।
দুই দেশের উত্তেজনা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ গ্রহণের পরে তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার ভেতরে কিছু কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছে এবং মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক ভঙ্গি অবলম্বন করেছে। মাদুরো ও তাঁর মিত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই অঞ্চলে চাপ বাড়াচ্ছে।
রয়টার্সের বিশ্লেষণ ও সরকারী সূত্র বলছে, ভেনেজুয়েলা সশস্ত্র বাহিনী মাদুরোকে সমর্থন জানিয়ে কাজ করছে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ কাগজে উঠে এসেছে এমন পরিকল্পনার কথা, যেখানে দেশভিত্তিক শতাধিক ছোট ইউনিট গঠন করে সম্ভাব্য মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গেরিলা ও নাশকতা কৌশল প্রয়োগ করা হতে পারে। নথি অনুযায়ী, প্রায় ২৮০টি স্থানে ছোট ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদিকে রয়টার্স হাইলাইট করেছে, সরকারের নিকটস্থ সামরিক ও সাগরীয় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সশস্ত্র বাহিনীর খাদ্য ও সরঞ্জাম সরবরাহে অভাব রয়েছে। বিশ্লেষকরা এই অতিরিক্ত মিলিশিয়া ও পুলিশ ব্যবহারকে দেশের সীমিত সামরিক সক্ষমতা পূরণের এক কৌশল হিসেবে দেখছেন।
গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দিয়েছে যে, ক্যারিবীয় সাগরে মাদুরো সম্পর্কিত গ্যাং বা মাদকচোরাচালানির বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সূত্র বলছে, এসব অভিযান ও বিমান হামলায় অন্তত ১৯টি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প এক পর্যায়ে স্থল হামলার ইঙ্গিতও দিয়েছেন যদিও পরে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা নাকচ করে দিয়েছেন।
আইনবিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভেনেজুয়েলায় যদি কোনো আন্তর্জাতিক দলের সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটে তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হতে পারে। রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জনমতও বিভক্ত; প্রায় অর্ধেক মানুষ ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানকে সমর্থন করেন না বলে একটি জরিপ তুলে ধরা হয়েছে।
ভেনেজুয়েলা সরকারের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে অঞ্চলটি নতুনভাবে উদ্বেগ ও উত্তেজনায় ছেয়ে গেছে। অবস্থান ঝোঁকানো ও কূটনৈতিক তর্ক-বিতর্ক চলমান থাকা সত্ত্বেও সামরিক প্রস্তুতি বৃদ্ধি ও সশস্ত্র বাহিনীর মোতায়েন আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্তকতার ইঙ্গিত বহন করছে।

