মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতীয় রুপির মূল্য এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই মুদ্রামান আরও নিম্নমুখী হতে পারে। বছরের শুরু থেকেই রুপির দরপতন অব্যাহত ছিল। সম্প্রতি এটি ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে, যা রুপিকে এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার মধ্যে নিয়ে গেছে।
রুপির পতনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হলে রুপির এই পতন কিছুটা ঠেকানো যেত, তবে সেই চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে মূল কারণ ভারতের শেয়ারবাজার। ১৯৯৩ সালের পর থেকে ইন্ডিয়ান স্টক মার্কেট অন্যান্য বাজারের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। চলতি বছর এমএসসিআই ইন্ডিয়া সূচকের ডলার রিটার্ন মাত্র ২.৫ শতাংশ, যেখানে বৃহত্তর উদীয়মান বাজারের ইনডেক্সের রিটার্ন ২৭.৭ শতাংশ।
এই ব্যবধানের কারণে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা দেশ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছেন। তারা এই অর্থকে ভালো পারফর্ম করা অন্যান্য বাজারে বিনিয়োগ করেছেন। রুপির নিম্নমুখী অবস্থায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন রপ্তানিকারকরা। মার্কিন চড়া শুল্কের কারণে তারা আগে ক্ষতির মুখে ছিলেন। রুপির দরপতন তাদের জন্য এই ক্ষতি কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের প্রযুক্তিখাতের শেয়ার কয়েকটি ত্রৈমাসিক ধরে সীমিত পরিসরে আটকে ছিল। এই সপ্তাহে তা সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। তবে আর কোনো ইতিবাচক দিক চোখে পড়ে না।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতি কিছুটা কমলেও পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি অক্টোবর মাসে রেকর্ড ৪১.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রুপির দরপতন অব্যাহত থাকলে জ্বালানি আমদানি ব্যয় বাড়বে এবং বিদেশি ঋণের খরচও বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে বিমান, ইলেকট্রনিকস ও অটোমোবাইল খাতের উৎপাদন খরচে। চার দশকের মধ্যে রুপির অবস্থান এতটাই দুর্বল যে বিদেশ ভ্রমণ ও বিদেশে শিক্ষার খরচও ক্রমেই বাড়ছে।
এ বিষয়ে ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি আনন্দ নাগেশ্বরন বলেন, তিনি রুপির দরপতন নিয়ে ‘নিদ্রাহীন রাত’ কাটাচ্ছেন না। স্বল্প মুদ্রাস্ফীতি ও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি তাকে চিন্তামুক্ত রাখছে। উল্লেখযোগ্য, রুপির দুর্বলতা নরেন্দ্র মোদির প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থিতা চলাকালীন বড় প্রচারণা–ইস্যু হিসেবে ওঠে। ২০১৩ সালে যখন মোদি প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন রুপির বিনিময়মূল্য ছিল ডলারের বিপরীতে ৬০.৫; দায়িত্ব গ্রহণের বছর তা ছিল ৬১। ক্ষমতায় আসার পর মুদ্রার অবমূল্যায়নের অর্থনৈতিক প্রভাবকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

