অনলাইন কনটেন্ট নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৪ কোটি ডলারের জরিমানার মুখে পড়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স। শুক্রবার এই জরিমানা আরোপ করা হয়।
কয়েক দিন আগেই ইউরোপে এ–সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর হয়েছে। সেই আইনের প্রথম শিকার হলো এক্স। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনায় মার্কিন সরকার ক্ষুব্ধ হতে পারে। ইইউর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, এক্সের ব্যবহারকারীরা অর্থের বিনিময়ে প্রোফাইলে নীল টিক যুক্ত করতে পারেন। সেই ব্লু টিকের ডিজাইন নিয়ে আপত্তি তুলেছে সংস্থাটি। তাদের অভিযোগ, এই নীল চিহ্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করতে পারে এবং প্রতারণার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, এক্স বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছে এবং গবেষকদের তথ্যভান্ডারে প্রবেশাধিকার দেয়নি। একই ধরনের অভিযোগ টিকটকের বিরুদ্ধেও উঠেছিল, তবে কিছু ছাড় দিয়ে তারা জরিমানা এড়াতে পেরেছে। ইউরোপ মূলত বড় প্রযুক্তি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ শক্ত করছে। তাদের লক্ষ্য, ছোট প্রযুক্তি কোম্পানির জন্যও সুযোগ তৈরি করা এবং গ্রাহকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ইউরোপ কেবল মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিকেই লক্ষ্য করছে। তবে ইইউ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, কোনো দেশের কোম্পানিকে লক্ষ্য করে আইন করা হয়নি; বরং ডিজিটাল ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ড বজায় রাখতেই এই প্রয়াস। তাদের দাবি, এসব মানদণ্ড এখন বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য।
ইইউর ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট বা ডিএসএ অনুযায়ী এক্সের বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে তদন্ত চলে। এরপরই জরিমানা আরোপ করা হয়। ডিএসএর মূল লক্ষ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বেআইনি ও ক্ষতিকর কনটেন্ট দমনে কঠোর করা। ইউরোপীয় কমিশনের প্রযুক্তিবিষয়ক প্রধান হেনা ভির্কুনেন বলেন, এক্সকে তুলনামূলকভাবে কম জরিমানা করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘন, ইইউর ব্যবহারকারীদের ওপর এর প্রভাব এবং লঙ্ঘনের স্থায়িত্ব বিবেচনা করেই জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কমিশন সর্বোচ্চ জরিমানা দিতে চায় না। উদ্দেশ্য হলো আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা। নিয়ম মানলে জরিমানার প্রশ্নই ওঠে না। ভির্কুনেন জোর দিয়ে বলেন, ডিএসএর সঙ্গে সেন্সরশিপের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় লাগবে না বলেও তিনি জানান।
অক্টোবরে মেটা ও টিকটকের বিরুদ্ধে ডিএসএর স্বচ্ছতা–সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। চীনা মার্কেটপ্লেস টেমুকে অভিযুক্ত করা হয় বেআইনি পণ্যের বিক্রি ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায়।
ইইউর সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স এক্সে একটি পোস্টে দাবি করেন, এক্স “সেন্সরশিপে অংশ নেয়নি” বলে কমিশন কোটি কোটি ডলার জরিমানা করতে যাচ্ছে—এমন গুজব ছড়িয়েছে। তার মতে, ইইউর উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমর্থন করা, অযৌক্তিক কারণে মার্কিন কোম্পানিকে আক্রমণ করা নয়।
টিকটক জানিয়েছে, তাদের বিজ্ঞাপনভান্ডার আরও স্বচ্ছ করতে তারা পরিবর্তন আনবে। তাদের আহ্বান, আইন যেন সব প্ল্যাটফর্মে সমানভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং প্রয়োগ যেন ধারাবাহিক হয়।
কমিশন জানিয়েছে, এক্সে বেআইনি কনটেন্ট ছড়ানো এবং তথ্য–বিকৃতি ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে তদন্ত চলছে। পাশাপাশি টিকটকের ডিজাইন, প্রযুক্তি এবং শিশু–সুরক্ষাসংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা নিয়েও পৃথক তদন্ত চলছে। ডিএসএ অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির বৈশ্বিক বার্ষিক আয়ের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে।

