চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সাম্প্রতিক মন্তব্য। এই মন্তব্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের পুরোনো একটি শব্দ—‘ফেংশি’। শব্দটির অর্থ হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা পৌঁছে দেওয়া। অনেক চীনা নাগরিকও শব্দটি খুব কম শুনেছেন। তবে এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতিতে শব্দটি ব্যবহার করেছে, তা বিশেষ তাৎপর্য তৈরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাপানের রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সরাসরি নির্দেশেই।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তাকাইচির মন্তব্য সি চিনপিংকে সরাসরি ক্ষুব্ধ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপেও সি বিশেষ করে তাইওয়ান বিষয়ে কথা বলেছেন। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন, আলোচনার সময় সির পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয় পেয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকি বলেন, সি বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর সূত্রপাত ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন–জাপান যুদ্ধ থেকে। এ যুদ্ধে শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য পরাজিত হয় জাপানের কাছে। সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান জাপানের দখলে যায়।
২০১৮ সালে সি চিনপিংয়ের লিউগং দ্বীপ সফরও সেই ইতিহাসের স্মরণ। দ্বীপটিতেই ছিল বেইয়াং নৌবহর, যেটি একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় এই নৌবহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির এই সফর ছিল অতীতের পরাজয় মনে রাখার বার্তা—চীন যেন আর দুর্বলতা দেখিয়ে একই ফল ভোগ না করে।
চীন–জাপান সম্পর্কের বর্তমান উত্তেজনা আরও বাড়ছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দেয়। চীনের অভিযোগ, তাকাইচির মন্তব্য জাপানের পক্ষ থেকে তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত। তবে জাপান বলছে, এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত। তাদের না ইচ্ছা আছে, না সামরিক সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা দূর করতে সংলাপই হতে পারে একমাত্র পথ। অবিশ্বাস কমে আলোচনা শুরু হলে উত্তেজনা কমার সুযোগ আছে। তবে সি চিনপিংয়ের ক্ষোভ না কমা পর্যন্ত পরিস্থিতি অচল অবস্থায়ই থাকতে পারে।

