Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Fri, Dec 19, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » তিতাস একটি নদীর নাম : অদ্বৈত মল্লবর্মণ
    সাহিত্য

    তিতাস একটি নদীর নাম : অদ্বৈত মল্লবর্মণ

    এফ. আর. ইমরানDecember 12, 2024
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এটি অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। এই একটি উপন্যাস লিখে লেখক খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র মালো শ্রেণীর লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।

    কাহিনী সংক্ষিপ্তসার

    উপন্যাসটি ৪টি অংশে বিভক্ত এবং প্রত্যেকটি অংশে ২টি করে উপ-অংশ রয়েছে।

    অর্থাৎ মোট ৮টি অংশে উপন্যাসটি বিস্তৃত।

    তিতাস একটি নদীর নাম-

    তিতাস নদীর উৎপত্তি মেঘনা নদী থেকে। মেঘনার জল নদীর এক পাড় ভেঙে জঙ্গল, মাঠ, ময়দানের ভেতর দিয়ে ঘুরে আবার মেঘনায় এসে পড়েছে। মেঘনা থেকে উদভূত এই ধারাই তিতাস নদী নামে পরিচিত। কাহিনীর সুচনাকালে তিতাসকে একটি জলভরা নদী হিসেবে লেখক বর্ণনা করেছেন। সারা বছরেই তিতাসের বুকে জল থাকে। তিতাস থেকে তেরো মাইল দূরে একটি নদী আছে বিজয় নামে। বিজয় নদীতে বর্ষাকাল ছাড়া জল প্রায় থাকে না এবং সেই কারণে বিজয় নদীর তীরে বসবাসকারী মালোদের আর্থিক ও শারীরিক অবস্থা খুবই দৈন্য। এইরকমই আর্থিক অনটনে ক্লিষ্ট দুই ভাই গৌরাঙ্গ ও নিত্যানন্দ বিজয়নদীর তীরে বাস করত। গৌরাঙ্গের বউ অনাহারে মারা গিয়েছিল। নিত্যানন্দের বউ ও দুই ছেলেমেয়ে ছিল। গৌরাঙ্গ তার দাদাকে পরামর্শ দেয় নয়ানপুরের ধনী বোধাই মালোর হয়ে খাটার জন্য। অন্যদিকে জমিলা বলে একজন নববধু তার স্বামী ছমির মিয়ার সঙ্গে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ফেরে নৌকা করে। আসবার পথে সে মালোপাড়ার ঘাটে একটি মেয়েকে দেখে এবং সই হিসেবে বন্ধুত্ত্ব পাতানোর আশা করে।

    প্রবাস খণ্ড

    বাসন্তী তার মাকে ডেকে বলে, “মা, ওমা, দেখ সুবলদাদা কিশোরদাদার কাণ্ড! আমি চৌয়ারি জলে ছাড়তে না ছাড়তে তারা দুইজনে ধরতে গিয়ে কি কাইজ্যা। এ কয় আমি নিমু, হে কয় আমি নিমু। ডরে আর কেউ কাছেও গেল না। শেষে কি মারামারি। আমি কইলাম, দুই জনে মিল্যা বানাইছ দুই জনে নিয়া রাইখ্যা দাও। মারামারি কর কেনে?”

    তিতাসের পাড়ে বসবাসী মালোদের মধ্যে একজন ছিল দীননাথ মালোর কমবয়েসী মেয়ে বাসন্তী। বাসন্তীর গ্রামেই ছিল কিশোর আর সুবল নামে দুজন ডানপিটে কমবয়েসি ছেলে। তারা দুইজনে মিলে বাসন্তীর মাঘমণ্ডল ব্রতর জন্য চৌয়ারির বানিয়ে দেয়। সুবলের বাবা মারা যাওয়ায় সে কিশোরের সঙ্গে নদীতে জাল বাইতো। কিশোর সুবলের থেকে তিন বছরের বড় ছিল। কিন্ত তারা ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের বন্ধু। একদিন কিশোরের বাবা কিশোর ও সুবলকে প্রবীণ জেলে তিলকচাঁদের সঙ্গে উত্তরে শুকদেবপুর গ্রামে পাঠায়। তখন বাসন্তীর বয়স ১১ বছর। কিশোররা শুকদেবপুরের মোড়ল বাঁশিরামের বাড়ি পৌঁছায় মাছ ধরার অনুমতি আদায়ের জন্য। এর মধ্যে চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে দোল পূর্ণিমা এসে যায়। শুকদেব পুরের খলাতে দোল খেলার জন্য শুকদেবপুরের সকলের আমন্ত্রণ পড়ে এবং বাঁশিরাম মোড়লের গাঙের রায়ত হিসেবে কিশোর-সুবলরাও ডাক পায়। দোল খেলার সময় তরুণীরা কিশোরকে রঙ মাখায়। কিন্তু তাকে রঙ মাখাতে গিয়ে একটি অবিবাহিতা তরুণীর হাত কাঁপতে থাকে। দোলের অনুষ্ঠান চলার সময় মেয়েটির সঙ্গে কিশোরের চোখাচোখি হয়। হঠাৎই বাসুদেবপুরের লোকেরা ওখানে আক্রমণ চালায় পুরানো গন্ডগোলের রেশ ধরে। একজন আক্রমণকারী ওই তরুণীর দিকে অগ্রসর হয়, কিশোর তাকে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে যায়। মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেলে কিশোর মেয়েটিকে পাঁজকোলা করে নিয়ে মেয়েটির মার কাছে নিয়ে যায়। এরপরে বাঁশিরাম মোড়লেরর বউয়ের পৌরোহিত্যে কিশোর ওই মেয়েটির সঙ্গে মালা বদল করে এবং মেয়েটির বাবা ও মা তাকে কিশোরের নৌকায় তুলে দেয়। কিশোরদের নৌকা যাত্রাপথে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে, শেষে তারা নয়া গাঙের খাঁড়িতে নৌকা বাঁধে। সেখানে তারা রাতে ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম ভেঙে দেখে যে তাদের নৌকায় ডাকাতি হয়ে গেছে এবং ডাকাতরা কিশোরের বউকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের নৌকা যখন তিতাসের মোহনায় পৌঁছায় তখন কিশোর জলে একজন মহিলাকে ভাসতে দেখে এবং বুঝতে পারে যে ওটা কিশোরেরই বউ এবং তারা মনে করে যে মেয়েটি মারা গেছে। কিশোরের চোখ লাল হয়ে ওঠে; তিলক সুবলকে বলে যে কিশোর পাগল হয়ে গেছে।

    নয়া বসত

    কিশোরের জালে অনেক মাছ উঠিয়াছে। বাঁশের গোড়ায় পা দিয়া, জলের হাতায় টান মারিয়া সে বুক চিতাইল, তার পিঠ ঠেকিল বেদিনীর বুকে। বেদিনী তরুণী, স্বাস্থ্যবতী। তার স্তন দুটি দুর্বিনীতভাবে উচাইয়া উঠিয়াছে। তার কোমল উন্নত স্পর্শ কিশোরের সর্ব শরীরে বিদ্যুতের স্পর্শ তুলিল। বেদিনী এক হাত ডান বগলের তলায় ও অন্য হাত বাম কাঁধের উপরে দিয়া বুক পর্যন্ত বাড়াইয়া কিশোরকে নিজের বুকে চাপিয়া ধরিল। অবলম্বন পাইয়া কিশোর পড়িয়া গেল না, কিন্তু দিশা হারাইল…

    এরপর চার বছর কেটে যায়। গৌরাঙ্গ ও নিত্যানন্দ দুই বুড়ো একটি বাচ্চা ছেলে অনন্ত ও তার মাকে নিয়ে নৌকায় বের হয়। গৌরাঙ্গ স্বগতোক্তি করে যে অনন্তর মা সে পেটে থাকা অবস্থায় ডাকাতের নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে একটা বালুচরে ওঠে এবং ঘটনাক্রমে এই দুই বুড়োর আশ্রয়ে ভবানীপুরে আসে। তারা ভাবে যে অনন্তর মার বরকে ডাকাতে মেরে ফেলেছে তাই তারা অনন্তর মাকে বিধবার পোশাকেই রাখত। কিন্তু অনন্তর মা জানত যে সে কিশোরের বউ এবং কিশোরের গ্রামের নামও তার মনে ছিল, কিন্তু সে কিশোর অথবা সুবলের নাম জানত না। তাই শেষে তারা অনন্তর মাকে সেই গ্রামে পৌঁছাতে আসে। গ্রামের ঘাটে অনন্তর মা দেখে একজন বুড়ো একটা পাগলকে জোর করে চান করানোর চেষ্টা করছে। গ্রামে অনন্তর মার সঙ্গে সুবলার বউয়ের পরিচয় হয়। অনন্তর মা তার কাছে সূতা কাটা শেখে। অনন্তর মার সঙ্গে আরেকজনের আলাপ হয় সে হল গ্রামের ধনী কালোবরণের মা। কালোর মার কথা থেকে জানা যায় সুবলার বউয়ের আসল নাম বাসন্তী, তার বিয়ে সুবলার সঙ্গে হয় এবং সুবলা মারা যাওয়ার পরে সে সুবলার বউ নামেই পরিচিত হয়। একজন বড় মাতব্বর রামপ্রসাদের পৌরোহিত্যে মঙ্গলা তার সমাজে, যার মধ্যে সুবলার শ্বশুর আর কিশোরের বাবা ছিল, তাতে অনন্তর মাকে অন্তর্ভুক্ত করে। রামপ্রসাদ একদিন রাতে ঘুরতে ঘুরতে বুড়ো রামকেশবের বাড়ি যায়, সেখানে রামকেশবের পাগল ছেলে তাকে মাটিতে গর্ত কেটে বলে “এই তোমার মেঘনা গাঙ, অইখানে খাড়ি। জাইগ্যা দেখি মাইয়া চুরি হইতাছে।”

    জন্ম মৃত্যু বিবাহ

    গ্রামে কালীপূজা হয়, পূজোতে সবাই চাঁদা দেয়, কিন্তু রামকেশবের চাঁদা মাফ হয়ে যায় তার ছেলে পাগল বলে। রামকেশব চাঁদা না দেওয়ার জন্য সে সঙ্কোচে প্রসাদ খায় না এবং তার ছেলে কিশোরকেও ঘরে বন্ধ করে রাখে পূজোর চারদিন। উত্তরায়ণ সংক্রান্তির দিন মালোরা প্রচুর খরচ করে খাওয়া দাওয়া করে। তাতে রামকেশব ঠিক করে সেও রামপ্রসাদ, মঙ্গলা ও তার ছেলে মোহন, সুবলার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর গ্রামের নতুন বাসিন্দা অনন্তর মাকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াবে। সুবলার বউ অনন্তর মাকে রামকেশবের বাড়িতে রান্নাঘরে পিঠা বানাতে নিয়ে যায়। সেখানে দুজনের কথোপকথনে জানা যায় যে কিশোর পাগল হয়ে বাড়ি আসার পর, বাসন্তীর বাবা কিশোরের বদলে সুবলের সাথে বাসন্তীর বিয়ে দেয়। সুবল একদিন কালোবরণের নৌকায় জিয়লের ক্ষেপ দিতে যায়। যখন নদীতে হঠাৎ তুফান আসে তখন সবাই নৌকা থেকে ঝাঁপ দিলেও সুবলের উপর নির্দেশ আসে লগি ঠেকিয়ে নৌকা বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তা করতে গিয়ে সে নৌকার তলায় চাপা পড়ে মারা যায়। এরপর থেকে অনন্তর মা প্রায় লুকিয়ে কিশোরকে দেখত। শীতে কিশোরের পাগলামি বেড়ে যায়। এরপর আরেক পাগলের সঙ্গে পড়ে নিজেকে জখম করতে থাকে। শেষে অনন্তর মা বাধ্য হয়ে কিশোরের সেবা করতে শুরু করে এবং কিশোর খানিকটা ভালো হয়ে ওঠে। এরপর দোলের দিন আসে; অনন্তর মা কিশোরকে রঙ মাখাতে যায়। কিন্তু রঙ মাখানোর পর কিশোর হঠাৎ অনন্তর মাকে পাঁজকোলা করে তুলে নেয় আর মূর্ছা যাওয়া অনন্তর মার আবরণ সরে যাওয়া বুকে মুখ ঘষতে থাকে। এসব দেখে গ্রামের মানুষ কিশোরকে প্রচন্ড মারধর করে। মারের চোটে কিশোর পরদিন ভোরে মারা যায়। আর তার চারদিন পরে অনন্তর মা মারা যায়।

    রামধনু

    সুবলের বউকে পাইয়া অনন্তের মা মনের আবেগ ঢালিয়া দেয়, তুমি না কইছিলা ভইন আমার একজন পুরুষ চাই! হ; চাই-ই ত। পুরুষ ছাড়া নারীর জীবনে কানাকড়ি দাম নাই।
    পুরুষ একটা ধর না।
    কই পাই?
    পাগলারে ধর।
    ধরতে গেছলাম। ধরা দিল না।
    ঠিসারা কইর না দিদি।
    আমি ভইন ঠিসারা করি না। সত্য কথাই কই। পাগলা যদি আমারে হাতে ধইরা টান দেয়, আমি গিয়া তার ঘরের ঘরনি হই। আর ভাল লাগে না। ……একলা জীবন চলে না। পাগলেরে পাইলে তারে লখ কইরা জীবন কাটাই।

    কাদির মিয়া ও তার ছেলের সকরকন্দ আলু বোঝাই নৌকা ভারী বর্ষণে ও জোড়ালো বাতাসে ডুবে যাওয়া উপক্রম হলে বনমালী ও ধনঞ্জয় তাদের ও তাদের আলু উদ্ধার করে নিজেদের জেলে নৌকাতে তুলে নেয়। বনমালী ও কাদির মিয়ার সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে। বনমালী জানায় মালোপাড়ায় তার বোনের বিয়ে হয়েছে, তার পরামর্শে সে ও কাদির মালোপাড়ায় আলু বেচতে যায়। ওখানে অনন্ত কাদির মিয়ার আলুর পসরার সামনে ঘোড়াঘুড়ি করে। বনমালী ও কাদির মিয়া দুইজনেই দেখে অনন্ত বিস্ময় দৃষ্টিতে রামধনুর দিকে তাকিয়ে আছে। বনমালীর অনন্তকে খুব পছন্দ হয়, তাকে নিয়ে একটু ঘুড়ে বেড়ায় ও তাকে একদিন নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দেয়। এদিকে সুবলার বউ অনন্তর পক্ষ থেকে অনন্তর মার শ্রাদ্ধের ব্যবস্থাদি করে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে বনমালীর বোন তদারকি করে, তার ছড়া কাটার ভালো ক্ষমতা ছিল। একদিন ঝড়ে সুবলার বউয়ের, মানে অনন্তর মাসীর, বাবার বাড়ি ভেঙে যায়। বাড়ি পুনরায় বানাতে প্রচুর খরচ হওয়ায় তার বাবা ও মা অনন্তকে, যে ওই বাড়িতেই থাকত, তাকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছা করতে থাকে। কালোবরণের মাও অনন্তকে রাখতে অস্বীকার করে কারণ তাদের বড় নৌকা ঝড়ে ভেঙে যাওয়ায় খুব ক্ষতি হয়েছে। একদিন বাসন্তীর, মানে সুবলার বউয়ের, মা অনন্তকে মারতে যায়, তাই নিয়ে মায়ে মেয়েতে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। এইসব কিছুতে বাসন্তীর মাথা গরম হয়ে যায় ও অনন্তকে বাড়ি থেকে দূর করে দেয়। অনন্ত গামছায় মাছ ধরে, একা ঘুড়ে বেড়ায়, একদিন বনমালীর বোন অর্থাৎ লবচন্দ্রের বউয়ের বাড়ি যায়, কিন্ত পরে নিজেই বেড়িয়ে যায়। কেউ জানত না সে কোথায় থাকে। শেষে বনমালী তাকে খুঁজে বার করে নিজের সঙ্গে ও বোন উদয়তারা অর্থাৎ লবচন্দ্রের বউ কে নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যায়। অনন্ত সেখানে বনমালীর পদ্মাপুরাণ পড়া এবং অন্যান্য লোকাচার ও অনুষ্ঠান অবলোকন করে। বনমালীর গ্রামে অনন্তর সঙ্গে একটি ছোট্ট মেয়ের পরিচয় হয়, সে জানায় তার নামও অনন্ত।

    রাঙা নাও

    বিরামপুর গ্রামে কাদির তার ছেলে ছাদির, ছাদিরের ছেলে রমু ও বউ খুশিকে নিয়ে বাস করে। কাদির তার ছেলেকে জানায় যে উজানচরের মাগন সরকার তার নামে ধারের মিথ্যে মামলা লাগিয়ে জমি দখল করে নিতে চায় যদিও কাদিররা পাট বেচে ধারের টাকাটা মিটিয়ে দিয়েছিল। এরমধ্যে খুশির বাবা তাদের বাড়িতে আসে মেয়েকে বাপের বাড়ি কয়েক দিনের জন্য নিয়ে যাবার জন্য। খুশির বাবা মুহুরী ছিল, সে বলে সে মামলা জিতিয়ে দেবে কাদিরকে, কিন্ত তাদের মধ্যে বচসা হয়ে যায়। এরপর কাদির মিয়া চোখ লাল করে মাগন সরকারের কাছে যায়, কিন্ত মাগন সরকার তাকে বলে যে এই শেষ বারের জন্য যেন তাকে এই সর্বনাশ করতে দেওয়া হয়, তারপর সে ভাল হয়ে যাবে। কাদিরও হতভম্ব হয়ে মেনে নেয়। কিন্ত পরদিনই মাগন সরকার নারকেল গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যায়। কাদির তা শুনে উদাস হয়ে যায়। ছাদির শ্রাবণে নৌকা দৌড়ে চালানোর জন্য বড় নৌকা বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে কাদিরের কাছে টাকা চাইলে কাদির দুহাত খুলে টাকা দিয়ে দেয়। দুজন মালো এসে ছাদিরের নৌকা বানিয়ে দিয়ে যায়। ভাদ্রের ১লা তারিখে সেই নৌকা জলে ভাসে। সেই দিন তিতাসে অনেক নৌকার সমাগম হয়। উদয়তারা, অনন্ত, অনন্তবালা, বনমালী একটা নৌকায় ছিল। আরেকটি নৌকা থেকে সুবলার বউ অনন্তকে দেখতে পেয়ে, তার নৌকায় গিয়ে ওঠে। কিন্ত সেখানে উদয়তারার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয় এবং সবাই মিলে সুবলার বউকে মারধর করে।

    দুরঙা প্রজাপতি

    —কিরে গোলাম! বিয়া করবি?
    —করমু।
    —ক দেখি বিয়া কইরা কি করে?
    —ভাত রান্ধায়
    —হি হি হি, কইতে পারলি না গোলাম, কইতে পারলি না। বিয়া কইরা লোকে বউয়ের ঠ্যাং কান্ধে লয়, বুঝলি হি হি হি। ……আমারে বিয়া করবি?
    মোটাসোটা ঠ্যাং দুটির ভয়ে ভয়ে তাকাইয়া অনন্ত বলিল, না।

    উদয়তারাদের হাতে মার খাবার পর সুবলার বউ অপমানে ঘরের মধ্যেই বেশীরভাগ সময় থাকতে শুরু করে। কিন্তু বামুন কায়েতের যুবকরা তার বাড়ির দিকে উঁকি ঝুঁকি মারা শুরু করে আর তার নামে কুৎসা রটায়। সুবলার বউ এর প্রতিবাদে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে তামসীর বাবার বাড়ির সামনে, ওখানেই বামুন, কায়েতদের বেশি যাতায়াত ছিল। সুবলার বউয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য মালো ছেলেরা একদিন তিনজন তবলা বাদককে মার দেয়। অন্যদিকে দৌড়ের সময় ছাদিরের নৌকাকে অন্য এক নৌকা ধাক্কা মেরে ভেঙে দেয়। বনমালী ছাদিরকে উদ্ধার করে। কাদির বনমালীকে আগেই চিনত, সে বনমালীকে আপ্যায়ণ করে। কাদিরের মেয়ে জমিলা উদয়তারাকে বলে সে তাকে শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় দেখেছিল এবং সই পাতানোর ইচ্ছা করেছিল। অনন্ত গ্রামে ফিরে পড়াশোনায় মন দেয় ও পড়াশোনাকে ভালোবাসে। এদিকে মালোপাড়ায় যাত্রাদলের রমরমাতে মালোরা দুদলে ভাগ হয়ে যেতে থাকে তাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণের উপর চিন্তাধারা ভিত্তিতে। সুবলার বউ মোহনকে সঙ্গে নিয়ে হরিবংশ, ভাটিয়ালি প্রভৃতি মালো সংস্কৃতির গান গেয়ে অন্য মালোদের যাত্রাদল থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয় না।

    ভাসমান

    যাত্রাদলের কাছে আত্মসমর্পণের পর মালোদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে এবং মেয়েদের বিলাসিতা বাড়তে থাকে। এরমধ্যে একদিন মালোরা বিস্ময়ে আবিষ্কার করে যে তিতাসের বুকে ভাসমান চর গজিয়ে উঠেছে। দূরদূরান্তের চাষিরা ওই চরের দখলের জন্য মারামারি শুরু করে। মালোরা বর্ষাকালের জলের উপরই নির্ভর করে থাকে। রামপ্রসাদ জেলেদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নিজে চর দখল করতে গিয়ে মারা যায়। এদিকে অনন্তবালার বিয়ের বয়স হয়ে যায়, কিন্ত সে অনন্তের আশায় বসে থাকে, যে কুমিল্লা শহরে চলে গিয়েছিল। অনন্তবালার বাবার পরামর্শে বনমালী অনন্তর শহরে যায় এবং অনন্তের সঙ্গে তার দেখা হয়। বনমালী এখন মাছের পোনার মজুরি খাটে। উদয়তারা বনমালীর বাড়ি থেকে অনেকদিন পরে শ্বশুরবাড়ীতে আসে এবং এসে বাসন্তীর, মানে সুবলার বউয়ের, সঙ্গে তার পুরনো ঝাগড়া মিটিয়ে ফেলে। মালোদের অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে এবং একে একে উদয়তারার বর, বাসন্তীর বাবা-মা, মোহনের বাবা মারা যায়। সুবলার বউ অত দু:খের মধ্যেও অনন্তর খোঁজ নিত। সে জানতে পারে অনন্তের সাক্ষাৎ বিরামপুরের কাদিরের সঙ্গে হয়। সেদিন বনমালী মারা যায়, তা দেখে কাদির তার ধানের গোলা খুলে দেয় বিতরণ করার জন্য। অনাহারে সুবলার বউ সবাইকে নিয়ে চিন্তায় দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে এবং একসময় তার শিথিল হাত থেকে জলভরা লোটা পড়ে যায়।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সাহিত্য

    শুভ জন্মদিন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ

    November 13, 2025
    সাহিত্য

    ডাকটিকিটে ফুটে উঠেছে হারানো যুগের গল্প

    October 10, 2025
    ফিচার

    পবিত্র রমজানের সম্ভাব্য তারিখ জানাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

    October 4, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.