“মৃত্যুক্ষুধা” এটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি সওগাত পত্রিকায় ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাস থেকে ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে মুদ্রিত হয়। গ্রন্থাকারে এটি ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ) প্রকাশিত হয়।বলা হয়েছে “মৃত্যুক্ষুধা“ কাজী নজরুলের ইসলামের “কালজয়ী” উপন্যাস। আরো বলা হয়েছে এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সাম্যবাদী চেতনার উপন্যাস।
গল্প সংক্ষেপ
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ। তৎকালিন দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে কাহিনীর বিকাশ। উপন্যাসের পটভূমি কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়কের বস্তি এলাকা। এ এলাকায় বাস করে একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবার। এ পরিবারে আছে রোগগ্রস্ত বৃদ্ধ মা, তিন পুত্রবধূ যাদের সকলেই বিধবা, আর তাদের সন্তানাদি। আর আছে তিন পুত্রবধূর একমাত্র দেবর প্যাঁকালে। সে সদ্য যুবক। বয়স আঠারো-উনিশ। পরিবারের লোকলোক সংখ্যা অনেক। সবার ভরণপোষণের ভার প্যাঁকালের ওপর ন্যস্ত। কুর্শি খ্রিষ্টান হলেও প্যাঁকালের ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল। সেজন্য বিধবা-রূপসী ভ্রাতৃজায়া মেজ-বউয়ের বিয়ের প্রস্তাব তার কাছে অতি তুচ্ছ। কুর্শিকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় প্যাঁকালে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে।
সপরিবার মেজ-বৌয়ের মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ। অন্যদিকে রুবি আনসারকে ভালোবাসলেও রুবির পিতা তাকে বিয়ে দেয় আইসিএস পরীক্ষার্থী মোয়াজ্জেমের সঙ্গে এমন একটি প্রেমের কাহিনী। মোয়াজ্জেমের মৃত্যুর পর বিধবা রুবির জীবনে নেমে আসে সমাজের সকল বিধিনিষেধ। নারী জীবনের দুবির্ষহ অন্ধকার এবং সমাজের বাস্তবচিত্র এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়। কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়ক। এ সড়কের বস্তি
এর পর শুরু হয় আনসার ও রুবির পর্ব। দেশপ্রেমিক সমাজকর্মী ও সংসার-বিরাগী আনসার এসে আশ্রয় গ্রহণ করে লতিফা ওরফে বুচির বাসায়। লতিফার স্বামী স্থানীয় কোর্টের নাজির। পরে কৃষ্ণনগরের জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটের তরুণী কন্যা সদ্য-বিধবা রুবির সঙ্গে শৈশব প্রণয়ের স্মৃতি আনসারের মনে উদয় হয়। যদিও রুবি-আনসারের পুনরায় সাক্ষাৎ ঘটেছে উপন্যাসের শেষাংশে। মাঝখানে কয়েক বছর দু’জনের সাক্ষাৎ হয়নি। কারণ রুবির অমতে তার বিয়ে হয়েছিল অর্থলোভী এক যুবকের সঙ্গে। তাদের সংসার টিকে ছিল মাত্র এক মাস। বাইরের সাজসজ্জা ও আচরণ রুবির বিধবাসুলভ হলেও মনে প্রাণে সে আনসারকেই স্বামী বলে মানে। আনসার রাজবন্দি হয়ে রেঙ্গুন চলে যায়, সেখানে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার আশায় ওয়ালটেয়ারে যায়। এ সংবাদ শোনামাত্র অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করে রুবি।

