Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Fri, Dec 19, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
    সাহিত্য

    মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

    হাসিব উজ জামানDecember 17, 2024
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী বাঙালি রাজনৈতিক নেতা। যিনি ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি “মজলুম জননেতা” নামে পরিচিত ছিলেন এবং আজীবন নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন।

    প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা:

    মাওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা) ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খান এবং মাতার নাম মওলানা মজির উদ্দিনের কন্যা মজিরুন্নেসা। শৈশবে তিনি পিতামাতাকে হারান এবং তার চাচা ও পীরের তত্ত্বাবধানে বড় হন।

    প্রাথমিক শিক্ষা তিনি গ্রামের মক্তবে সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার জন্য ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি দুই বছর অধ্যয়ন করেন এবং ইসলামি জ্ঞান অর্জন করেন। তার শিক্ষাজীবন তাকে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জীবনে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায়।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ব্রিটিশ শাসনামলে। বিশেষ করে ১৯১৭ সালে, যখন তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ময়মনসিংহে তার সাহচর্যে আসেন। এরপর তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি কৃষক-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম শুরু করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টি গঠন করেন। যা তাকে সারাদেশব্যাপী জনপ্রিয়তা এনে দেয়।

    ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চেহারা প্রকাশ পেলে, ভাসানী সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদবিরোধী নেতা হিসেবে প্রগতিশীল ও কমিউনিস্টদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি আওয়ামী লীগ গঠনে শীর্ষ নেতৃত্বের একজন হলেও, রক্ষণশীল ও সাম্রাজ্যবাদের অনুগতদের সঙ্গে একই দলে থাকা অসম্ভব হওয়ায় প্রগতিশীল ও কমিউনিস্টদের নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন।

    তার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য। কারণ তিনি সামাজিক বিপ্লব চেয়েছিলেন, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে বলতে পারেননি।

    মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনের এই সূচনা পর্ব তাকে পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। এই দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক এবং যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত হন, যিনি তখন কারাবন্দী ছিলেন।

    আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তিনি আট বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে দলটি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।

    ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাঙ্গাইলের কাগমারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে মাওলানা ভাসানী এবং প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। মাওলানা ভাসানী স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে অবস্থান নেন, যা দলের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করে। ফলে, তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন।

    মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রভাব ফেলে। তার নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দর্শন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন একজন প্রভাবশালী তৃণমূল রাজনীতিবিদ। যিনি আজীবন কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কৃষক আন্দোলন এবং তৃণমূল রাজনীতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

    কৃষক আন্দোলনে ভূমিকা-

    ভাসানী ব্রিটিশ শাসনামলে আসামের ভাসান চরে কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেন, যা তাকে “ভাসানী” উপাধি এনে দেয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টি গঠন করেন, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার নেতৃত্বে কৃষকরা জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে।

    তৃণমূল রাজনীতি-

    ভাসানী সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে তাদের সমস্যার সমাধানে কাজ করতেন। তিনি ভোটের রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পরিবর্তে ভাত-কাপড়ের রাজনীতি করেই মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন। তার এই তৃণমূল রাজনীতি তাকে “মজলুম জননেতা” হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়।

    মাওলানা ভাসানীর এই সংগ্রাম ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন। ন্যাপের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।

    ১৯৬৭ সালে ন্যাপ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়: চীনপন্থী ন্যাপ (ভাসানী) এবং মস্কোপন্থী ন্যাপ (ওয়ালী)। মাওলানা ভাসানী চীনপন্থী অংশের নেতৃত্ব দেন।

    মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ পূর্ব পাকিস্তানে গণঅভ্যুত্থান সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। তবে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মতবিরোধের কারণে ন্যাপ বারবার বিভক্ত হয়।

    মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনের এই অধ্যায় তাকে পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থী রাজনীতির অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলার কাগমারী গ্রামে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলনের আয়োজন করেন, যা পরবর্তীতে কাগমারী সম্মেলন নামে পরিচিত হয়। এই সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির তীব্র সমালোচনা করেন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে অবস্থান নেন।

    কাগমারী সম্মেলনের প্রেক্ষাপট:

    ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সেন্টো (CENTO) ও সেভো (SEATO) চুক্তিতে যোগদান করে, যা পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোটের অংশ করে তোলে। এছাড়া, পাকিস্তান বাগদাদ চুক্তি (Baghdad Pact) ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সামরিক চুক্তি (SEATO) সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। এসময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এই সামরিক জোটগুলোর সমর্থক ছিলেন।

    মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের এই সামরিক জোটগুলোর সদস্যপদ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সমালোচনা করে বলেন, পাকিস্তানকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে, যা শুধুমাত্র দেশটির জনগণের স্বার্থকে প্রতিফলিত করবে। তিনি পাকিস্তানকে জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।

    কাগমারী সম্মেলনের মূল দিকসমূহ:

    ভাসানী পাকিস্তানকে সামরিক জোট থেকে বেরিয়ে এসে জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে।

    ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিলেন। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানকে তার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার সুযোগ দিতে হবে।

    তিনি পাকিস্তানের সামরিক চুক্তিগুলোর সমালোচনা করে বলেন, এসব চুক্তি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তিনি পাকিস্তানকে এসব চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।

    সম্মেলনের ফলাফল-

    কাগমারী সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগে ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে মতপার্থক্য তীব্র হয়। ভাসানী তার সমর্থকদের নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

    কাগমারী সম্মেলন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমণ শুরু করলে, ভাসানী লন্ডনে বিপ্লবী অস্থায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ৮ এপ্রিল লন্ডনের পথে রওনা হন কিন্তু ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছানোর পর ভারত সরকার তাকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়নি। ফলস্বরূপ, তিনি ভারতে গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন।

    ভারতে অবস্থানকালে, ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করেন। তিনি জাতিসংঘ, চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এছাড়া, তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।

    মুক্তিযুদ্ধের পর, ২২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ভাসানী বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপসারণের দাবি জানান। এছাড়া, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখনী প্রকাশ করেন। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

    মাওলানা ভাসানীর মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি তার অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।

    তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, যিনি ইসলামী মূল্যবোধ ও সমাজতন্ত্রের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দর্শন গড়ে তুলেছিলেন।

    ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি:

    ভাসানী ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা বা পীর, যার অগণিত ভক্ত ও মুরিদ ছিল। তিনি হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ছিল, যা তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে।

    রাজনৈতিক দর্শন:

    ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন ছিল সমাজতান্ত্রিক ও ইসলামী মূল্যবোধের সমন্বয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইসলামের মূল শিক্ষা অনুযায়ী সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এজন্য তিনি কৃষক-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন এবং তাদের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন।

    ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ):

    ভাসানী ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রগতিশীল ও কমিউনিস্টদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ন্যাপের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্তবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এবং একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছেন।

    কাগমারি সম্মেলন:

    ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনে ভাসানী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি পাকিস্তানকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার আহ্বান জানান এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বলেন।

    মাওলানা ভাসানীর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক দর্শন তাকে বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামে একটি অমূল্য রত্ন করে তুলেছে। তার জীবন ও কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ইসলামী মূল্যবোধ ও সমাজতন্ত্রের সমন্বয় সম্ভব এবং তা একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।

    মাওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। কারণ তিনি ছিলেন তৃণমূলের নেতা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামী।

    মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড আজও স্মরণীয়।

    মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনে কিছু সমালোচনা ও বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি সবসময় সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি এবং তার কিছু সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নিচে তার রাজনৈতিক জীবনের সমালোচনা ও বিতর্কের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:

    মুসলিম লীগের বিরোধিতা:

    মাওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের গণবিরোধী চেহারা প্রকাশিত হলে, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম বিরোধী রাজনীতি শুরু করেন। এটি তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি সাহসী পদক্ষেপ হলেও, অনেকেই তার এই বিরোধিতাকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা হিসেবে দেখেছিলেন।

    ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা:

    মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি তার রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি তার অবিচলতা প্রদর্শন করলেও, অনেকেই তাকে বিভাজনকারী হিসেবে সমালোচনা করেছেন।

    পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা:

    কাগমারি সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির তীব্র সমালোচনা করে মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদ অনুগত বিদেশনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এটি তার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে অবস্থান হলেও, অনেকেই তাকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞা করার জন্য সমালোচনা করেছেন।

    ভারত-বিরোধী মনোভাব:

    মাওলানা ভাসানীর সাম্রাজ্য বিরোধী মনোভাব ছিল প্রকট। তিনি বারবার দাবি তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে ভারতই হলো উত্তম বন্ধু। পাকিস্তান তার বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের প্রতি যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতো তা ভাসানী মেনে নিতেন না।

    আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অবহেলা:

    মৃত্যুর পর ইতিহাসের পাতা থেকে মাওলানা ভাসানীকে মুছে দেয়ার কিছু প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ভাসানী। অথচ সেই আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে না।

    মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবন ও কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। তবে তার অবদান ও আদর্শ আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    বাংলাদেশ

    সার্বভৌমত্বের পক্ষে কণ্ঠস্বরই কি নতুন টার্গেট?

    December 19, 2025
    শিক্ষা

    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগে কোচিংয়ে ভর্তি, লাগাম টানতে নতুন নীতিমালা

    December 19, 2025
    ব্যাংক

    দুই সপ্তাহে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা

    December 19, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.