Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Fri, Dec 19, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » মাটির জাহাজ : মাহমুদুল হক
    সাহিত্য

    মাটির জাহাজ : মাহমুদুল হক

    এফ. আর. ইমরানJanuary 2, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    ‘মাটির জাহাজ’ এটি মাহমুদুল হকের ১৯৭৭ সালে রচিত উপন্যাস। এই উপন্যাসকে বোঝার জন্য সময়কাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার জীবন আমার বোন উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধের আগের। আর মাটির জাহাজ পরবর্তী সময়কালের। জীবন আমার বোনে যে আশংকা তাই বাস্তব হয়ে উঠলো মাটির জাহাজে।

    জীবন আমার বোনে কি আছে-খোকা একেবারেই উন্নাসিক, চলমান আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। সে তার বোন-আড্ডা-নীলা ভাবি এবং পশ্চিমা অধ্যয়নজাত জ্ঞান নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তার আসা যাওয়ার পথে কিংবা আড্ডাস্থলে অথবা বাসায়ও যুদ্ধের আঁচ এসে লাগে। সে বিরক্ত হয়-কারণ তার বোধ এই যুদ্ধ সার্বিক কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না, যারা যুদ্ধ যুদ্ধ বলে চিল্লাচ্ছে তারাই ‘আয়ুব খান যেদিন প্রথম আসে স্টেডিয়ামের ভিড়ের কথা মনে আছে আপনার? এরা তো তারাই, সেই মানুষজনই’-খোকার ভাষ্য। এবং রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কেও খুব ভালো বুঝে গেছেন এই লেখক। আরেক চরিত্র এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র- যুদ্ধের পর যারা নিয়ন্তা হয়ে উঠেছেন দেশের, সেই লুলু চৌধুরী বলছেন-আমাদের কাজ হবে শুধু পাবলিক সেন্টিমেন্টটাকে মূলধন করে সময়মতো তা কাজে লাগানো, আমাদের ভূমিকা তো এ-ই! এ খুবই সত্য মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পরে রাজনীতির এই চেহারা সবার কাছেই পরিষ্কার।

    জীবন আমার বোন উপন্যাসে খোকার শরীরেই যুদ্ধ পরিস্থিতির চৌহদ্দিতে ঘোরাঘুরি করেছেন লেখক নিজে। মিছিলের ভেতরে থেকে, মিছিলের ফাঁক গলে গলে হাঁটলে যেমন মানুষের চেহারা আর আচরণই মিছিল হয়ে ওঠে-খোকা তাই দেখে-দেখে দেখে বিরক্ত হয়। ক্রমশ যুদ্ধ থেকে দূরে সরে আসার বিষয়ে মনস্থির করে-কিন্তু যুদ্ধই তার ঘরে হানা দেয়। হারিয়ে ফেলে সে তার সবচেয়ে প্রিয় বোনকে। এখানে এসে শেষ হয় জীবন আমার বোন উপন্যাসটি। পাঠক কি বোঝে না বোঝে, কিন্তু অস্বস্তি ঠিকই থেকে যায়। মুক্তিযুদ্ধ কি তবে ভুল ছিল-খোকার পক্ষেই কি তবে পাঠকের রায় গড়ায়। জীবন আমার বোন উপন্যাসে খোকার পক্ষে শেষ পর্যন্ত হয়তো পাঠকের সমর্থন থাকে না। কিন্তু খোকার আশংকা যারা উড়িয়ে দিয়েছেন, তারা মাটির জাহাজ পড়লে ভুল ভাঙবে। দেশের প্রতি লেখকের আকুতি আপোষহীন মানবিকতার-মানবের বিশ্বাবোধের। সংসার-সন্তান-বৃক্ষনদীআকাশ সম্ভূত জীবন তিনি প্রবলভাবেই চান। যুদ্ধ সময়কার গলি ঘুপচি ঘেঁটে তিনি বুঝেছেন সেই জীবন আসবে না। সে জন্যেই খোকার সবচেয়ে যে প্রিয় রঞ্জু-ছোট বোন-পঁচিশে মার্চেই দুইজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রঞ্জুদের জন্য নিশ্চয়তার পরিবেশ যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে যে আসবে না, মানুষের সংসারজীবন ফিকে হয়ে আসবে, তার প্রমাণ মাটির জাহাজ। খোকাদের কাজের মেয়ে ময়নাকে ফিরিয়ে নিতে আসা বাবার স্বপ্ন ‘জয়বাংলা যদি হয়েই যায় তাহলে আর মেয়েটাকে ঝিগিরি করায় কে’ হাহাকার হয়ে বাজে মুক্তিযুদ্ধের পরে এবেং মাটির জাহাজ উপন্যাসে।

    কোন লেখকেরই নিজস্ব শেকড় মাটি গন্ধ থাকে তার সমস্ত সৃষ্টি মিলিয়ে আবার আরেক রকম সৃষ্টি হয়- পাতাপুষ্পফল মিলিয়ে যেমন বৃক্ষ। জীবন আমার বোনের পূর্ব প্রেক্ষাপট কালো বরফ উপন্যাসে পাওয়া যায়-দেশভাগের যন্ত্রণা। গল্প বলার ঢঙ শুনলেও মনে হয় সিরিজ হিসেবে না হোক গলপ হিসেবেই মাহমুদুল হক সমস্ত সাহিত্য কর্ম মিলিয়ে কি যেন বলতে চেয়েছেন, তা হয়তো মাটির জাহাজ উপন্যাসের চরিত্র কুসুমের মা-ওমা-মায়ো বলে ডুকরে ওঠা টুকুই তিনি শোনাতে চেয়েছেন তার পাঠককে। তার গল্প বলার কৌশল নিয়ে নিজেই বলছেন- ‘গল্পেরতো একটা নিজস্ব কালক্রম থাকে। অর্থাৎ তুমি যদি একটি গল্পের নির্দিষ্ট কোন বিন্দুতে দাঁড়াও, তাহলে দেখতে পাবে ওই বিন্দুর ঘটনাগুলো ঘটমান অর্থাৎ বর্তমানে ঘটছে, কিছু ঘটনা পিছনে ফেলে এসেছো অর্থাৎ সেগুলো অতীত আর কিছু ঘটান ভবিষ্যতে ঘটবে।

    কথ্য-গল্পেরও কিন্তু এরকম কালক্রম থাকে।’ এটা তার মায়ের গল্প বলার ঢঙ। তাইলে হয়তো যেই গল্প বলা শুরু হয়েছিল কালো বরফে তারই ধারাবাহিকতা মাটির জাহাজ। রবীন্দ্রনাথ যেমনটি বলেছেন- ‘সহিত শব্দ হইতে সাহিত্য শব্দের উৎপত্তি। অতএব ধাতুগত অর্থ ধরিলে সাহিত্য শব্দের মধ্যে একটি মিলনের ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। সে যে কেবল ভাবে-ভাবে ভাষায়-ভাষায় গ্রন্থে-গ্রন্থে মিলন তাহা নহে; মানুষের সহিত মানুষের, অতীতের সহিত বর্তমানের, দূরের সহিত নিকটের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ যোগসাধন সাহিত্য ব্যতীত আর-কিছু দ্বারাই সম্ভবপর নহে।’ এই অন্তরঙ্গ যোগ সাধনের কারিগর মাহমুদুল হক। সময় এবং ইতিহাস নিয়েই তিনি মানুষের সামনে দাঁড়ান, আর সেই সময়ের ভাঁজে ভাঁজে গুমরে ওঠা মানবিক বোধকে তিনি তুলে ধরেন তার লেখনিতে, ভাষায়, শিল্প ব্যঞ্জনায়। তাই অতীত আর বর্তমানের প্রবাহমানতা, ইতিহাসের ঝোঁক-গতিমুখ কেমন যেন নির্লিপ্তের মতো দেখে যান তিনি, কিন্তু যতদিন লিখেছেন তার ধারাবাহিকতাটুকু তুলে রেখেছেন পাঠকদের জন্য। মিলন ঘটিয়েছেন তার দেখে আসা সময়ের সাথে বর্তমানের পাঠকের। কালো বরফ থেকে মাটির জাহাজ সেই ইতিহাসেরই ক্রমবয়ান।

    মাটির জাহাজের শব্দ বিন্যাস খই ফোটার সঙ্গীত তৈরি করে। অসংখ্য শব্দ ছটফট করে-নেচে ওঠে-ছন্দ তৈরি করে-হাসায়, হঠাৎ করেই ভাবায় আবার যেন খিলখিল করে বয়ে চলে। প্রথম যৌবনপ্রাপ্ত মুক্ত রমনীর চাঞ্চল্য এই উপন্যাসের শব্দ চয়নে। যেমন হিমখচ্চর-এক হিমখচচর নিয়েই লেখক তালতলা থেকে কুঞ্জঘোষের দোকান, টুকটুকে কোন মেয়ে থেকে কুঞ্জঘোষের রাজরানী বউ এরপর হিমখচ্চর যে সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক তাও বলে ফেলছেন এবং তা কেবল ওই হিমখচ্চরকে উল্টেপাল্টেই। শুরুতেই আকাশের বর্ণনাটুকু একবার পড়ে নিন- ‘সবেমাত্র ছেড়ে এসেছে বেতকা, এগোচ্ছে তালতলার দিকে, জয়নাল গলা বাড়িয়ে দেখে বিদুকুটে চেহারা হয়েছে আকাশের; ছাইগাদার গায়ে কেউ যেন নষ্টামি ক’রে খাবলা খাবলা মাটি লেপে দিয়েছে। খলবলে ছুকরির মতো দিনটা কি সুন্দর ঝামরে উঠেছিল, যখন সে লঞ্চে ওঠে; এখন কোথায় মাজা-কোমরে তিরতিরে একটু মাংস ধরবে, চেকনাই বাড়বে, তা নয় অসময়ে ফিকিরে আছে থম ধরার।’

    তারপর আসে শিঙাড়া, এই শিঙাড়া জিনিসটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বস্তু। সেই শিঙাড়াই আবার রক্ষী বাহিনী হয়ে যাচ্ছে, মনোহরকেও পেয়ে যাচ্ছে সে শিঙাড়ার সূত্র ধরে। কিভাবে তা জয়নালের অনুভূতিতেই দেখুন। ‘ঘিয়ে ভাজা শিঙাড়ার গন্ধ যখন এক এক লাফে রক্ষীবাহিনীর মচমচে বুটজতো ডিঙিয়ে ধলেশ্বরীর উন্মাতাল ঝাপটায় আছড়ে পড়ে ঘপাং ঘপাং ঘাই মারা শুরু করেছে, মিড়মিড়ে রোদটুকুও গায়েব, ছাই চাপা পড়েছে সূর্য, হলহল করছে গরম, গুমোট জ’মে পাথর হয়েছে, দেখে সামনে দাঁড়িয়ে মনোহর, তার বিখ্যাত কান এঁটো করা হাসিটি অবিকল সেই রকমই আছে।’ পাঠক বুঝতেই পারে না জয়নাল কোথায় এসেছে কোথায় যাবে, কি তার কাজ, এমনকি অর্ধেক পড়ার আগ পর্যন্ত সবাই ভাবে জয়নাল বোধ হয় বিয়ে করতেই তালতলা এসেছে। কিন্তু ওই যে ভাষা আর শব্দের ছটফাটনি তাতেই পাঠক মজে যায়। উপন্যসাটি যে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী কাছকাছি সময়ের তা শুধুমাত্র এই রক্ষীবাহিনীর উপস্থিতিই টের পাওয়া যায়। নইলে এটাকে যে কোন সময়ের যে কোন সমাজের উপন্যাস বলে চালিয়ে দেয়া যায়। এটা লেখকের চাতুরতা, এটা তার নির্লিপ্ততাও বটে, সময়কে নয় ঘটানাকে মানুষ বা সমাজকে দিয়ে সময়কে উপস্থাপনের চেষ্টা তার।

    ওই মনোহরের কাছেই এসেছে জয়নাল। জয়নাল যৌন ব্যবসার দালাল, মনোহর হয়তো তার বাল্য বন্ধু, যেখানে এসেছে সেই তালতলা হয়তো তারই গ্রাম। এখান থেকেই সে আরো একটি মেয়ে নিয়ে যাবে নিজের ব্যবসার জন্য। তারপর সেই মেয়ে সংগ্রহের কাহিনী, নৌকায় ঘোরাঘুরি, ঢাকা শহের ক্লেদাক্ত জীবনের গুষ্ঠি উদ্ধার, একটু নির্মল বাতাসে নদীর জলে মন খোলার অবকাশ পেয়ে জয়নালের মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে আলমাছি বিবি, বুবি, বাড়িওয়ালি এমন অনেক চরিত্র। সেই বাড়িওয়ালীদের একজন লোহার ব্যবসা আর চামড়ার ব্যবসাকে একই মনে করে, তার শুধু ভাড়া পেলেই হয়। কিন্তু সকল ব্যবসাতেই ঝক্কি থাকে, একবার কে যেন বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে সব টাকা নিয়ে গিয়েছিল, বারে বারে বাসা বদল, সব মিলিয়ে মোটেও শান্তি নেই জয়নালের। তার গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা আলমাছি বিবি, সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বুবি, কাউকেই এই তালতলায় এসে আর ভাল্লাগে না তার। একছার নিজের জীবনটাকেই গালিগালাজ করে, আইয়ুব খানের গদিতে মাল সাপ্লাই করলেও এক আলমাছির কাছে সে কেন যেন বাধা থাকে, অথচ আলমাছি তার বিয়ে করা বউ না।

    কিন্তু বউয়ের আকাঙক্ষা থেকেও সে মুক্ত হয় না, একটা সংসারের চাহিদা তার ভেতর বাহিরে হু হু করে ওঠে, সেদিন মনোহরের এনে দেয়া কালামেঘ খেয়ে সে মাতল হয়ে যায়- ‘জয়নাল তুই বদলে যা, এখন জমিজিরেত বসতবাড়ি হোক তোর ডবকা মেয়েমানুষ, তুই তার কোমর ধর, নলের গড়ের গন্ধে তুই উথাল-পাতাল মাতাল হয়ে যা’। কিন্তু ওই ব্যবসাই তার সব নষ্ট করে দিল। এমনকি নারী সম্পর্কিত ভাবনাতেও। আলমাছি, বুবি, হেনা, কুসুম, দেখাই বিবির তেরো বছরের মেয়েটি। প্রত্যেকেই শরীর সর্বস্ব। সৃষ্টিকর্তা তাদের পিঠের জায়গায় বুক দেননি বলেই জয়নাল আজ ব্যবসা করে খেতে পারে। তাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি সে বিমুগ্ধ। যারা জীবন আমার বোনের লুলু চৌধুরীকে দেখেছেন সমাজের চোখে এরা সবাই লুলু চৌধুরী। ময়নার বাবা যে বলেছিল আর ঝিয়ের কাজ করতে দিবে না তার মেয়েকে। সেই ময়নাই মাটির জাহাজের কুসুম কি হেনা।

    মনোহরের সাথে জয়নালের সম্পর্ক কি তার ভার পাঠকের ওপরই ছেড়ে দেন লেখক। মনোহরের একটানা কথা বলায় ক্ষেপে যায় জয়নাল, ধমকায়-কিন্তু গোটা উপন্যাস জুড়ে নিজেই কথা বলে বেশি। দুজন মধ্যবয়স্ক মানুষের মধ্যে ক্রিয়া করতে থাকা প্রকৃতি-নদী-বৃক্ষবৃষ্টি আর কাজের উত্তেজনা, চারপাশের চাপা আতংক সবই ফুটে ওঠে উপন্যাসে। সমস্ত জাগতিক বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় যেন কথা বলে যাওয়া। জয়নাল তাই প্রচুর কথা বলে। তার কথাতেই দেশকালসময়কে চিত্রিত করেন মাহমুদুল হক। যেমন জয়নাল বলছে- ‘এখন ক্লাব পোষো, টাউট পোষো, কোন্ আত্মীয় পুলিশের চাকরিতে আছে তাকে খুঁজে বের করো, মেম্বার ধরো, সরদার ধরো। খেপ মেরে যাবার সময় যে কাস্টমার তোমার তোশকের তলা হাতড়ে পাঁচ টাকার নোট মেরে নিয়ে গেছে, সে ব্যাটা এখন মিনিস্টার, সে তোমাকে চেনে না, কস্মিনকালেও তোমাকে দেখে নি, তোমার নাম শোনে নি, তাকে দিয়েও তোমার কোন কাজ হবে না।’

    এই পরিস্থিতিইতো ছিল যুদ্ধের পর-নাকি ভুল বিশ্লেষণ হচেছ। তাহলে গ্রামে থাকা মনোহরের কথা শোনা যাক এবার- ‘দিনকাল খুব খারাপ জয়নাল ভাই, খুব খারাপ। গাঁয়ে তো আর থাকো না, বুঝবে কি। উঠেছ আমার কাছে, ভালো-মন্দ বুঝে একটু হুঁশজ্ঞান ক’রে চলতে হবে না! কিছু একটা ঘটে গেলে আমাকেই দুষবে। আজকাল বহুত রকমের উৎপাত গাঁয়ে। দলও বহুত কিসিমের। চাঁদা দাও, তাহলে ধড়ের ওপর মাথাটি আছে। না দিলে নেই। দিনের বেলা এক দল, রাতের বেলা আরেক দল; অস্ত্রফস্ত্র তো সব খোলামকুচি, এই আমার মতো লগিঠেলা আধমারকেও কালেভদ্রে চাঁদা দিতে হয়।’ দিনের বেলায় রক্ষীবাহিনী আর রাতে কারা। যারা ইতিহাস জানেন, তারা বোঝেন রাতে কারা আসে। জনগণের পক্ষের শক্তি বলে জনগণই তাদের সমস্ত নিপীড়নের উৎস। বোলতলী যাওয়ার পথে লাশের গন্ধ পায় জয়নাল, গুলিবিদ্ধ ফুলে ওঠা লাশ দেখতে পায়। মনোহর বলে, ‘হয়তো আরা দু’চারটে এরকম ভেসে আছে, কোথাও না কোথাও। বুঝে দেখুন কি রকম দিনকাল এসেছে’।

    এগুলো জয়নালের মেয়ে সংগ্রহের আশপাশের দৃশ্য। কখনোই মূল কাহিনী নয়। মূল কাহিনী ও-ই, জয়নালের যৌনব্যবসার জন্যে মেয়ে সংগ্রহ। আর তা করতে গিয়ে মুখোমুখি হওয়া দৃশ্যের বিষয়ে এই উপন্যাসের চরিত্র কিংবা লেখক নির্বিকার। কিন্তু পাঠক বুঝতে পারে-এই দৃশ্যগুলো ছাড়াওতো উপন্যাসটি তৈরি করা যেত। তাহলে এর উপস্থিতি কোন বক্তব্যকে হাজির করে। ওই সময়ের বক্তব্য, যে সময়ের আশংকা ছিল জীবন আমার বোন উপন্যাসে। খোকাদের অড্ডায় সবুজ টুপি পরা স্বেচ্ছাসেবক, যারা শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলেছিল তারাই কি মাটির জাহাজে অস্ত্র হাতে বা রক্ষীবাহিনী হয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এমনটা মনে হতেই পারে।

    মাটির জাহাজ উপন্যাসে অসংখ্য চরিত্র আর সংলাপ-শব্দ-দৃশ্যায়ন আছে। এটা একধরণের কৌশল যার মানে হচ্ছে পরোক্ষভাবে বিষয়কে উপস্থাপন। যেমন অসংখ্য চরিত্র এবং তাদের ভাষা। মূলত বিক্রমপুর অঞ্চলের ভাষার ব্যবহার বেশি হলেও এক জয়নালকেই বলতে শোনা যায় নানা ঢঙে নানা অঞ্চলের ভাষা। অস্ত্রধারী বা মনোহরকেও বিক্রমপুর অঞ্চলের মনে হয়। কিন্তু দেখাই বিবির ভাষা বরিশাল বা ভোলা। নাদেরালির ভাষা ঢাকাইয়া, হেনারটাও তেমনই শোনায়। চরিত্রগুলোর ব্যাপ্তিও কম-কেউ শুধুমাত্র একটি সংলাপ নিয়ে হাজির-কেউ একটি দৃশ্যে। কিন্তু সব চরিত্র নিয়েই উপন্যাসটি তৈরি হয়েছে-কেউ কেবল চরিত্র হয়েই আসেন নি। বলতে বা দেখাতে এসেছেন-আকুতি আর ভয়, সংশয়কে ফুটিয়ে তুলতে এসেছেন। অসংখ্য ইমেজকে জোড়া দিয়েছেন মাহমুদুল হক-নির্লিপ্তভাবেই-চিত্রকরের মত। সব মিলিয়ে যে ছবি ফুটে ওঠে তা কেবল যুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহতাকেই তুলে ধরে। যেখানে দেহ বিক্রি-অস্থিরতা-নিরাপত্তাহীনতা এবং মানুষের উন্মুল হওয়ার একটা চিত্র তৈরি হয়।

    পোলিশ চলচ্চিত্রকার ক্রিস্তফ জানুসির একটা মন্তব্য আছে। এই উপন্যাসকে বোঝার জন্য উপযুক্ত মন্তব্য সেটি। তিনি বলছেন- ‘সীমান্ত জিনিসটা পুরোপুরি কৃত্রিম। তা মানুষের তৈরি এবং বিতর্কযোগ্য। দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ বিতর্কের পরিসমাপ্তি হয় যুদ্ধে, যা কোনো সমাধান নয়।’ আমাদের ইতিহাসেও যুদ্ধই সমাধানের উপায় হয়ে এলো। জীবন আমার বোনে খোকা এই সমাধান মেনে নেয়নি। খোকা বলছে যে দেশ দুশো বছর ধরে কেবলই রক্ত চাই রক্ত চাই করছে সে তার দেশ মাতৃকা নয়। কারণ যুদ্ধ কখনোই প্রকৃত সমাধান হতে পারে না। কিন্তু মানবের সভ্যতার দাবিই আজ যুদ্ধ, বাঙালী যেমন নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ করেছে-কিউবা কি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতিহাসই তাই। সবার জন্যে সেই যুদ্ধ সুফল বয়ে আনে না। আমাদের দেশে তাই হয়েছে। যুদ্ধ করেছে যে জাতি, স্বাধীন দেশের সেই মানুষের ভাতের জন্যে পরিচিত ভুমিজলআকাশ ছেড়ে অজানায় গিয়েছে-শেকড় ছাড়া হয়েছে। ওই পেট ভরে ভাত খেতে পারাটাই তাদের সব।

    স্বাধীন দেশ সেটুকর নিশ্চয়তাও তাদের দিতে পারেনি। তাইতো কুসুম মিথ্যা প্রলোভনে উন্মুল হচ্ছে-মনোহরের নৌকায় চড়ে বসেছে। ভাতের ক্ষিধা মিটাবে সে-কিভাবে নিজেই জানে না। শরীর বিক্রির প্রথম রাত তার যেভাবেই কাটুক যাওয়ার পথে সে শিহরিত আর শংকিত। নিজ মাটি ছেড়ে যাবার কষ্টে গুমরে গুমরে উঠছে বারবার। কাঁদছে না, শংকায়-মান রক্ষায়। কিন্তু মনোহর যখন বলে ওঠে- ‘কি আর বলবে, কি-ই-বা বলার আছে! আমরা গেঁয়োভূত মানুষ, ভাতে মরি ভাতে বাঁচি, কিন্তু তাই বলে গঞ্জনা’ মনোহর নাক ঝাড়ে, তার গলার স্বর ভেঙ্গে আসে,‘আর একটা কথা, তোমার যদি মায়ের গর্ভে জন্ম হয়ে থকে, যদি একবাপের জন্ম হয়, তাহলে একটা কথা তুমি রেখো জয়নাল ভাই, কখনো ভাতের খোঁটা দিতে পারবে না’। এই কথাটুকু কুসুমের তন্ত্রীতে বেজে ওঠে। হাড়ে হাড়ে আবেগের বান ডাকে। এতোক্ষণ ধরে এই কি বলতে চেয়েছেন লেখক, ভাত সর্বস্ব এই মানুষগুলোর কথাই। কারণ ভাত, ওই ভাতের জন্যেইতো নিজের মা পরিবার প্রথম ঘরের সন্তানকে ছেড়ে যাচ্ছে কুসুম, এর এই কুসুমের জন্যইতো জয়নাল এসেছে এই গ্রামে, জয়নালেরওতো ভাতের ক্ষুধা আছে।

    ভাতের কথা কানে যেতেই সজাগ হয় কুসুম-নদীর ভেজা জল তাকে আবিষ্ট করে। ভাতের টান বড় টান, মনোহরের আকুতি শুনে কুসুম আর আটকে রাখতে পারে না নিজকে। ডুকরে ওঠে ‘মা-ওমা-মায়ো’ ব’লে।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সাহিত্য

    শুভ জন্মদিন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ

    November 13, 2025
    সাহিত্য

    ডাকটিকিটে ফুটে উঠেছে হারানো যুগের গল্প

    October 10, 2025
    ফিচার

    পবিত্র রমজানের সম্ভাব্য তারিখ জানাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

    October 4, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.