‘হলুদ বসন্ত’ এটি বুদ্ধদেব গুহ’র বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলোর মাঝে একটি উপন্যাস। এটি ১৯৭৬ সালে আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত।
উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা-
অল্প কথায় বলতে গেলে, ঋজু নামের এক যুবকের নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছোট বোন নয়নার প্রেমে পড়াকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে মাত্র নব্বই পৃষ্ঠার বইটার কাহিনি। তবে বৃহৎ পরিসরে ছক কেটে আলাপ করতে গেলে, হলুদ বসন্তকে নিছক প্রেমের উপখ্যান বলা যাবে না কিছুতেই। হৃদয়ের অনুভূতি, অনিশ্চয়তা, মস্তিষ্কের যুক্তির টানাপোড়েন, হিংসা, ক্রোধ, নিজের কাছে নিজে হেরে যাওয়া, ছলাকলা-কত ধরণের মানসিক প্রবৃত্তি একই সাথে উঠে এসেছে এই বইয়ের পাতায়। যদিও পুরো গল্প জুড়ে নয়না আর ঋজুর মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বটাই মূল উপজীব্য।
‘ফোনটা বাজছিল’ বইয়ের কিছু কথাঃ
ফোনটা বাজছিল। অন্য প্রান্তে ফোনটা কুরর- কুর কুরর- কুর করে কোনও মেঘলা দুপুরের কামাতুরা কবুতরের কথার মতো বাজছিল। শুনতে পাচ্ছিলাম। এখন রাত প্রায় সাড়ে ন’টা। টেলিফোনটা ওদের বাড়ির সিঁড়িব কাছে আছে। এখন বাড়িতে কে কে থাকতে পারে? সুজয় নিশ্চয়ই আড্ডা মারতে বেরিয়েছে।
কদিন বাদে দোল। পাড়ায় দোল-পূর্ণিমার ফাংশন হবে। তাই নিয়ে পাড়ার রুস্তমরা ব্যস্ত। ফাংশন না কচু। ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে রেলিশ করে কিছু মেয়ে দেখা। রুস্তমদের রং ফিকে হয় না। বুকের লোম পেকে গেলেও না। বেশ আছে ওরা। টেরিনি-টেরিকটে মোড়া বৃদ্ধ বালখিল্যের দল। নয়নার মা নিশ্চয়ই ঠাকুরঘরে চুপ করে বসে আছেন।
এমন ভাব, যেন পৃথিবীর যাবতীয় ঘটনা-দুর্ঘটনা সব ওই ঠাকুরঘরের কন্ট্রোলরুম থেকেই রেডিয়ো কন্ট্রোলে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফোনটা বাজছেই- বাজছেই- বাজছেই। নয়না এখন কী করছে? বোধহয় ঘুমুচ্ছে। সারাদিন পরিশ্রম তো কম নয়। নয়নার কথা ভাবলে আশ্চর্য লাগে। ওর সমবয়সি মেয়েদের পটভূমিতে ও বর্ষার জল- পাওয়া মৌরলা মাছের মতো লাফায়, অথচ ও আমার কাছে এলে শীতের সংকোশ নদীর ঘরেয়া মাছের মতো ধীরা হয়ে থাকে।
আস্তে মাথা দোলায়, আলতো করে চোখ তুলে চায়, মুখে যত না বলে, চোখ দিয়ে তার চেয়ে বেশি কথা বলে। ওকে বুঝতে পারি না- ওকে একটুও বুঝতে পারি না। অথচ ওকে কী করে বোঝাই যে ওর এক চিলতে হাসি, ওর এক ঝিলিক চোখ চাওয়া- এইসব সামান্য সামান্য দান আমার সমস্ত সকাল, আমার সমস্ত দিন কী অসামান্য মহিমায় মহিমামণ্ডিত করে তোলে। গত পাঁচ বছর ধরে কখনও এ কথাটা ওকে বোঝাতে পারিনি- কিংবা ও বুঝলেও, না বোঝার ভান করে থেকেছে…….

