‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ (Pride and Prejudice) এটি জেন অস্টেন রচিত একটি উপন্যাস। ১৭৯৬ সালে এই উপন্যাস রচনার কাজ শুরু হয়। এটি লেখিকার উপন্যাস রচনার দ্বিতীয় প্রয়াস এবং তার সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি, প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস, নরদ্যাঙ্গার অ্যাবে উপন্যাসত্রয়ীর অন্যতম। উপন্যাসটি প্রকাশিত হতে বারো বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। অস্টেন ১৭৯৭ সালেই মূল পাণ্ডুলিপিটি রচনার কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন। এই পাণ্ডুলিপি রচনার কাজটি তিনি করেন হ্যাম্পশায়ারের স্টিভেনটনে। এখানকারই এক টাউন রেকটরিতে তিনি তার পিতামাতা ও ভাইবোনদের সঙ্গে বাস করতেন। অস্টিন প্রথমে উপন্যাসটির নাম দিয়েছিলেন ফার্স্ট ইম্প্রেশনস। তবে এই নামে বইটি আদৌ কোনোদিন প্রকাশিত হয়নি। বরং তিনি পাণ্ডুলিপিতে ব্যাপক সংশোধনী আনেন, তারপর পুনরায় উপন্যাসটির নতুন নামকরণ করেন এবং শেষে প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস নামে বইটি প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে অস্টেন সম্ভবত ফ্যানি বার্নির সিসিলিয়া উপন্যাসটির শেষ অধ্যায়ের (যার শিরোনামও “প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস”, শব্দটি এখানে মোটা বড়ো হাতের হরফে তিনবার মুদ্রিত হয়েছিল) দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে অনুমিত হয়।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র এলিজাবেথ বেনেট। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাভাগের ইংল্যান্ডের ভূম্যধিকারী উচ্চবিত্ত সমাজে তার আচরণ, বেড়ে ওঠা, নৈতিকতাবোধ, শিক্ষা ও বিবাহকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের ঘটনাগুলি বিন্যস্ত। এলিজাবেথ এক মফঃস্বলবাসী ভদ্রলোকের দ্বিতীয়া কন্যা। সে লন্ডনের নিকটস্থ হার্টফোর্ডশায়ারে অবস্থিত মেরিটন নামে এক কাল্পনিক শহরে বাস করত।
উপন্যাসের পটভূমি ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল হলেও, এই উপন্যাসটি আধুনিক পাঠকের কাছেও সমান জনপ্রিয়। আজও সাহিত্য সমালোচকগণ এই বইটির প্রশংসা করে থাকেন। আধুনিক কালে এর জনপ্রিয়তার ফলস্রুতিতে এই উপন্যাস একাধিকবার চলচ্চিত্রায়িত ও মঞ্চায়িত হয়েছে এবং এই উপন্যাসের চরিত্র ও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু অবলম্বনে একাধিক উপন্যাস ও গল্পও লিখিত হয়েছে। অদ্যাবধি সারা বিশ্বে এই উপন্যাসের প্রায় ২ কোটি সংস্করণ বিক্রি হয়েছে। বইটি বাংলা অনুবাদ করেছেন তুহিন কুমার মুখোপাধ্যায়।
অন্যভাবে সার-সংক্ষেপ:
প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস জেন অস্টিনের অন্যতম প্রধান উপন্যাস। অষ্টাদশ শতাব্দীর অভিজাত ইংজেদের যে চিত্র উপন্যাসটিতে প্রতিফলিত হয়েছে, তা শুধু ব্যঙ্গাত্মকই নয়, যথেষ্ট হৃদয়গ্রাহীও বটে। লেডি ক্যাথেরিনের মতো জমিদার পত্নীর আভিজাত্যের অহংকার,ক্যারোলিনের মতো উচ্চবিত্ত ঘরের মেয়েদের আরো ধনী ঘরে বিয়ের জন্য যে প্রাণান্তকর চেষ্টা, তা অনেকেরই হাসির উদ্রেক করবে।
মি. হার্স্ট যেন ঐ অভিজাত শ্রেণীটির সঠিক প্রতিভূ। মি. বেনেটের পরিবারটি যেন ইংরেজ অভিজাত শ্রেণীর জন্য একটি সমস্যা। অর্থবিত্তের দিক দিয়ে তারা সচ্ছল নয়। কিন্তু পরিচয় দিতে হবে অভিজাত বলে। মি. বেনেট তার খালার নিকট থেকে দানসূতে একটি বড় সম্পত্তির মালিক হন। কিন্তু উইলের শর্ত ছিল, মি. বেনেটের কোন পুত্র সন্তান নাহলে, তার মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তির মালিক হবে তার অন্য এক (তুতো) ভাইয়ের পুত্র।
একটি পুত্র সন্তানের আশায় মিসেস বেনেট পর পর পাঁচটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে শেষে বুঝতে পারলেন, তাদের কোন পুত্রভাগ্য নেই। অথচ একটি পুত্র সন্তান না হলে, মি. বেনেটের কন্যারা, তার মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। মিসেস বেনেট ঐ হৃদয়হীন শর্তটির জন্য মনে মনে সব সময় তার খালা শাশুড়িকে অভিশাপ দেন।
উপন্যাসটির মূল ঘটনা যেন আবর্তিত হয়েছে ডার্সি ও লিজাকে নিয়ে। ডার্সি ধনী জমিদার পিতার শিক্ষিত এবং একমাত্র পুত্র।পিতার অবর্তমানে জমিদারির মালিক। সে অহংকারী হলেও অমিতব্যয়ী নয়। সে অসচ্ছল ও সংকীর্ণমনা। তাকে যেন শেখানোই হয়েছে সাধারণ মানুষকে অর্থ্যাৎ প্রজাদের ঘৃণা করতে হবে। লিজা বেনেট পরিবারের এক ব্যতিক্রম। সে অসচ্ছল অভিজাত ঘরের বুদ্ধিমতী মেয়ে।
পিতার দুর্বল শাসনের সুযোগ নিয়ে পরিবারের ছোট পেয়েগুলো হয়ে উঠেছে বেয়াড়া, যা লিজাকে সব সময়ই পীড়া দেয়। সে সব কিছু সহজে গ্রহণ করতে চায় না। ডার্সির প্রতি প্রথম তার যে প্রেজুডিস ছিল, পরে সে তা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ডার্সি এক সময় যে প্রাইড বা অহংকার ছিল, লিজার সংস্পর্শে এসে সেও তা পরিত্যাগ করে। ডার্সির প্রাইড আর লিজার প্রেজুডিসই উপন্যাসটির নামকরণের বিষয়। (সংগৃহীত)

