“সূর্যের দিন” এটি ১৯৮৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত অন্যতম সেরা কিশোর উপন্যাস। বইয়ের প্রারম্ভিক কাহিনী পাঠককে এক নিঃশ্বাসে বইটি শেষ করতে বাধ্য করবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কিশোর সমাজ যে উত্তেজনাকর অভিঙ্গতার মুখোমুখি হয়েছিল তা এই উপন্যাসে ফুটে উঠেছে। তবে গতানুগতিক উপন্যাসের মতই লেখক উপন্যাসটি সমাপ্ত করেছেন অনেক কথা অব্যক্ত রেখে।
“সূর্যের দিন” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ এ বাড়ির নিয়ম হচ্ছে যাদের বয়স বারোর নিচে তাদের বিকেল পাঁচটার আগে ঘরে ফিরতে হবে। যাদের বয়স আঠারোর নিচে তাদের ফিরতে হবে। ছ’টার মধ্যে। খোকনের বয়স তেরো বছর তিন মাস। কাজেই তার বাইরে থাকার মেয়াদ পাঁচটা। কিন্তু এখন বাজছে সাড়ে সাতটা। বাড়ির কাছাকাছি এসে খোকনের বুক শুকিয়ে তৃষ্ণা পেয়ে গেল। আজ বড়চাচার সামনে পড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। অবশ্যি চমৎকার একটি গল্প তৈরি করা আছেই। থোকন ভেবে রেখেছে সে মুখ কালো করে বলবে- সাজ্জাদের সঙ্গে স্কুলে খেলছিলাম, হঠাৎ দেখলাম বিরাট একটা মিছিল আসছে। সবাই খুব স্লোগান দিচ্ছে- ‘জাগো বাঙালি জায়গা। আমরা দূর থেকে দেখছি। এমন সময় গণ্ডগোল লেগে গেল। পুলিশের গাড়ির উপর সবাই ইট-পাটকেল মারতে লাগল। চারদিকে হৈচৈ ছোটাছুটি। আমি সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে ছুটতে লাগলাম। পেছনে পটাপট শব্দ হচ্ছে, বোধহয় গুলি হচ্ছে। আমরা আর পেছন ফিরে তাকাই নি, ছুটছি তো ছুটছিই। ফিরতে দেরি হলো এই জন্যে। খুব বিশ্বাসযোগ্য গল্প। আজকাল রোজই মিছিল হচ্ছে। আর রোজই গণ্ডগোল হচ্ছে। মিছিলের ঝামেলায় পড়ে যাওয়ার কথা সবাই বিশ্বাস করবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, বড়চাচাকে ঠিক সাধারণ মানুষের পর্যায়ে ফেলা যায় না। তার সম্ভবত তিন নম্বর চোখ বলে কিছু আছে…….
কাহিনি সংক্ষেপ:
খোকনদের বাড়ির নিয়ম হচ্ছে, যাদের বয়স বারোর নিচে তাদের বিকেল পাঁচটার আগেই ঘরে ফিরতে হবে। যাদের বয়স আঠারোর নিচে তাদের ফিরতে হবে ছয়টার মধ্যে। খোকনের বয়স তেরো বছর তিন মাস। কাজেই তার বাইরে থাকার মেয়াদ ছয়টা। কিন্তু এখন ঘড়িতে সাড়ে সাতটা। তাই কড়া ধাতের বড় চাচার ভয়ে খোকনের বুক শুকিয়ে তৃষ্ণা পেয়ে গেল। বড় চাচার সামনে পড়লে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। অবশ্য অজুহাত হিসেবে চমৎকার আর বিশ্বাসযোগ্য গল্পও তৈরি করে খোকন। কিন্তু বড় চাচার সম্ভবত তিন নম্বরি বলে কোনো চোখ আছে। তাই সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও ধরা পড়ে যায় বড় চাচার কাছে। শাস্তি হিসেবে বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায় খোকনের জন্য।
কিন্তু তাই হলে কি চলে! স্কুলের ছয় বন্ধুকে নিয়ে খোকনরা একটি দল গঠন করেছে। নাম ভয়াল ছয়। দলের সদস্য বল্টু, সাজ্জাদ, টুনু, ফজলু, টগর আর খোকন। পায়ে হেঁটে আফ্রিকার গহিন অরণ্যে যাওয়া তাদের লক্ষ্য। বিকেলে সে বিষয়ে মিটিং হবে স্কুলমাঠে। কিন্তু বাসায় আটকে থাকলে সেটি কীভাবে সম্ভব ভেবে পায় না খোকন। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে টুনু, বল্টু আর দলের সবচেয়ে সাহসী ছেলে সাজ্জাদ। কিন্তু বড় চাচার ভয়ে টুনু পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে সাজ্জাদ আর বল্টু। তাদের কাছে ডেকে সন্দেশ খাইয়ে ঠান্ডা মাথায় কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেন বড় চাচা। কিন্তু খোকনের সঙ্গে দেখা করতে দেন না তিনি।
শেষ পর্যন্ত ভয়াল ছয়ের মিটিং পণ্ড হয়ে যায়। হতাশ হয়ে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এক মিছিলের সামনে পড়ে যায় সাজ্জাদ আর বল্টু। যখনকার কথা বলছি, তখন দেশের অবস্থা খুব খারাপ। প্রায়ই মিছিল-মিটিং আর কারফিউয়ে দেশ প্রায় অচল। সেদিনেও সাজ্জাদ আর বল্টু মিছিলে ঢুকতেই শুরু হয় ভীষণ গোলাগুলি। বাধ্য হয়ে অপরিচিত বুড়ো এক দাদুর বাসায় ঢুকে পড়ে তারা। কারফিউয়ের কারণে সেদিন রাতে ওই বাড়িতেই আটকে থাকতে হয়। বল্টু কাঁদতে শুরু করে। ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় সাজ্জাদেরও। তবে বুড়ো দাদু আর তার একমাত্র নাতনি নীলু তাদের মন ভালো করার চেষ্টা করে। সকালে বাড়ি ফিরে সাজ্জাদ শোনে, ওর দুলাভাই রাতে ওকে খুঁজতে গিয়ে বাসায় ফেরেননি। ওর বোন অঝোরে কাঁদছেন। কাঁদতে শুরু করে সাজ্জাদও। দিশেহারার মতো খুঁজতে থাকে দুলাভাইকে। এই সময়ে দেওয়া হলো স্বাধীনতার ঘোষণা। কয়েক দিন পরই শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিরা। সোনালি নতুন সূর্যের দিনের আশায় বুক বেঁধে বড়দের সঙ্গে সাজ্জাদের মতো অনেক কিশোরও ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। খোকনও বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দেয় যুদ্ধে। সবার স্বপ্ন একটিই, অন্ধকার রজনীর শেষে এরা আনবে একটি সূর্যের দিন। (গল্প অসমাপ্তের ন্যায়)

