‘শবে বরাতের পরিচিতি ও গুরুত্ব’- শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত বিশেষ ফযীলতপূর্ণ একটি রাত। আমাদের দেশে এ রাত ‘শবে বরাত’ নামে পরিচিত। এর আরবী পরিভাষা ‘লাইলাতুল বারাআত’ অর্থাৎ মুক্তির রজনী। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান তথা শা’বানের মধ্যবর্তী রাত বলা হয়েছে।
সহীহ হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন।
শবে বরাতের আলোচনা কুরআনে ও হাদীসে-
শবে বরাতের বর্ণনা সরাসরি কুরআনে পাওয়া যায় না। তবে কিছু মুফাসসির সূরা দুখানের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াতকে শবে বরাতের রাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে শবে বরাতের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। সহীহ ইবনে হিব্বানে হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫)
যেসব গুনাহ ক্ষমা লাভে বাধা সৃষ্টি করে-
হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী কিছু মারাত্মক গুনাহ আল্লাহর অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ গুনাহসমূহ হলো: ১. শিরক 2. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা 3. হিংসা 4. মাতা-পিতার অবাধ্যতা 5. ব্যভিচার 6. মদপান 7. ভাগ্য বা ভবিষ্যত গণনা 8. আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ 9. অহংকারবশত পোশাক টাখনুর নিচে লম্বা করা
শবে বরাতে করণীয় আমলসমূহ-
(ক) রাতে জাগ্রত থাকা:
ইবাদতের উদ্দেশ্যে শবে বরাতে জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব। কেউ কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, কেউ দোয়া-দরুদ পড়তে পারেন, কেউ হাদীস অধ্যয়ন করতে পারেন।
(খ) কবর যিয়ারত করা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে কবরস্থান যিয়ারত করতেন এবং মুমিনদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতেন।
(গ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করা:
এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উদ্দেশ্যে আহ্বান করেন:
“আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছো কি কোনো রিয্ক প্রার্থনাকারী? আমি তাকে রিয্ক দান করব।”
(ঘ) নফল নামায আদায় করা-
এ রাতে বেশি করে নফল নামায পড়া উত্তম। সালাতুত তাসবীহ আদায় করা বিশেষ ফযীলতপূর্ণ।
(ঙ) কুরআন তিলাওয়াত ও যিকির করা-
যে কোনো পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল ও দরুদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল।
(চ) ১৫ শা’বান দিনে রোযা রাখা-
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যখন মধ্য শা’বানের রাত আসে, তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় কর এবং দিনে সিয়াম পালন কর।” (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩৮৮)
শবে বরাতে বর্জনীয় বিষয়সমূহ-
কিছু ভুল আমল ও কুসংস্কার রয়েছে, যা শবে বরাতের গুরুত্বকে ক্ষুণ্ণ করে। যেমন:
- আলোর সাজসজ্জা করা– ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়, বরং প্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া অনুচিত।
- পটকা ফুটানো বা আতশবাজি– এটি ইসলামে নিষিদ্ধ ও অপচয়।
- বিশেষ খাবারের আয়োজন করা– হালুয়া-রুটি বিশেষভাবে তৈরি করা শরীয়তে নেই।
- দলবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে ইবাদত করা– এ রাতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করা উত্তম।
নিষ্কর্ষ-
শবে বরাত ইবাদত, তওবা ও দোয়ার একটি বিশেষ রাত। এ রাতে অতীতের গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। আমাদের উচিত, এ রাতে একনিষ্ঠভাবে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া, গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা এবং শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকা।

