‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পার্বতী’ ভালোবাসার অমর উপাখ্যান ‘দেবদাস’। দেবদাসের নায়িকা পার্বতী বিশ শতকেই বাঙালি হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিলো। উপন্যাসে পার্বতীর অভিমানগুলো পত্রপল্লবের মতো ছড়িয়ে পড়লেও তার চরিত্রের দৃঢ়তা, ঋজুতা, সাহসিকতা প্রত্যাখ্যানের মতো মানসিকতা তাকে অনন্য করে।
তাই সে যখন গভীর রাতে একাকী দেবদাসের ঘরে ঢোকে, তখন সমকালীন নারীর অবস্থান থেকে তাকে ভিন্নতর মনে হয়। তাকে দেখে দেবদাস ভীত, সঙ্কুচিত হয়। যে কারণে সে ভীতচকিতের মতো বলে, ‘কিন্তু আমিই কি মুখ দেখাতে পারব’। জবাবে পার্বতী তেমনি অবিচলিত কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘তুমি? কিন্তু তোমার কি দেবদা?
একটুখানি মৌন থাকিয়া পুনরায় কহিল, তুমি পুরুষ মানুষ। আজ না হয় কাল তোমার কলঙ্কের কথা সবাই ভুলবে? দু’দিন পরে কেউ মনে রাখবে না। কবে কোন্ রাতে হতভাগিনী পার্বতী তোমার পায়ের ওপর মাথা রাখার জন্য সমস্ত তুচ্ছ করে এসেছিল।’
পার্বতী দেবদাসের পায়ের ওপর মাথা রেখে বলেছিলো, ‘এইখানে একটু স্থান দাও, দেবদা।’ কিন্তু দেবদাস চরিত্র এত দৃঢ় ছিল না। দেবদাস পারুকে এক চিঠিতে লেখে, তোমাকে আমি যে বড় ভালবাসিতাম, তাহা আমার কোনদিন মনে হয় নাই। আজও তোমার জন্য আমার অন্তরের মধ্যে নিরতিশয় ক্লেশ বোধ করিতেছে না।
শুধু আমার বড় দুঃখ যে, তুমি আমার জন্য কষ্ট পাইবে। চেষ্টা করিয়া আমাকে ভুলিও এবং আন্তরিক আশীর্বাদ করি, তুমি সফল হও। দেবদাসের এ কথায় বয়সী দ্বিজবর এবং সন্তানের পিতার সঙ্গে বিয়ে ও সংসার যাপনে পার্বতী বিন্দুমাত্র হতাশা, দুঃখ, ক্লেশের প্রকাশ ঘটায়নি।
বরং এটাই যেন বাস্তবতা এবং তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যে তাকে যেতে হবে, সেই বোধ তাড়িত হয়ে সে সংসারের কাজকর্মে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরেছিল। এক প্রত্যাখাত নারী তার আত্মসম্মানটুকুর মূল্য দিতেই যেনো সরে গিয়েছিলো।
“তোমাকে আমি যে বড় ভালবাসিতাম, তাহা আমার কোনদিন মনে হয় নাই। আজও তোমার জন্য আমার অন্তরের মধ্যে নিরতিশয় ক্লেশ বোধ করিতেছে না। শুধু আমার বড় দুঃখ যে, তুমি আমার জন্য কষ্ট পাইবে। চেষ্টা করিয়া আমাকে ভুলিও এবং আন্তরিক আশীর্বাদ করি, তুমি সফল হও।”

