সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হলেও এর ইতিহাসে রয়েছে বিতর্ক, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রত্যাখ্যানের নজির।
বিশ্বসাহিত্যের বহু স্বনামধন্য লেখক নোবেল পাননি। লিও তলস্তয়, জেমস জয়েস, মার্সেল প্রুস্ত ও মিলান কুন্ডেরার মতো লেখকেরা নোবেলজয়ীদের তালিকায় জায়গা পাননি। অথচ এমন অনেক লেখক পুরস্কার পেয়েছেন, যাদের নাম আজ বিস্মৃতপ্রায়। সাহিত্যিকদের নামের এই বাদ-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। ২০১৯ সালে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি লিন্ডস্ট্যাড স্বীকার করেন, মহাত্মা গান্ধী নোবেল না পাওয়াটা ছিল ‘সবচেয়ে বড় বাদ পড়ার’ ঘটনা। ইউরোপকেন্দ্রিক মানসিকতাকেই তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের ঘটনাও বিরল নয়। ফরাসি দার্শনিক ও সাহিত্যিক জ্যাঁ পল সার্ত্রে ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে নোবেল জিতলেও তা গ্রহণ করেননি। পুরস্কার ঘোষণার আগেই সুইডিশ একাডেমিকে চিঠি দিয়ে তিনি জানান, পুরস্কারের সঙ্গে তিনি নিজের নাম যুক্ত করতে চান না। তিনি সব ধরনের আনুষ্ঠানিক পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন এবং মনে করতেন, নোবেল গ্রহণ করলে তা লেখকের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
১৯৫৮ সালে নোবেল জিতেছিলেন রুশ লেখক বরিস পাস্তের্নাক। যদিও প্রথমে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, পরে সোভিয়েত সরকারের চাপে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তার উপন্যাস ‘ডক্টর জিভাগো’ তৎকালীন কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লেখা বলে বিবেচিত হয় এবং এর জেরে পাস্তের্নাক রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের মুখে পড়েন।
নোবেল জিতে বিতর্কের মুখে পড়ার ঘটনাও আছে। ২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হ্যান্ডকের পুরস্কারপ্রাপ্তি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বসনিয়া যুদ্ধের সময় সার্বদের সমর্থন এবং যুদ্ধাপরাধী স্লোবোদান মিলোসোভিচের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কারণে বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা প্রকাশ করা হয়। বসনিয়া ও কসোভোর নেতারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হন।
নোবেলজয়ী লেখকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে বারবার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক সময় ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির প্রশংসা করেছিলেন, যদিও পরে তিনি নিজের অবস্থান বদলান এবং ফ্যাসিবাদের কঠোর বিরোধিতা করেন। আর্জেন্টিনার লেখক হোর্হে লুই বোর্হেস সামরিক জান্তাদের সমর্থন করায় বিতর্কিত হন।
সাহিত্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি যেমন লেখকের মর্যাদা বৃদ্ধি করে, তেমনি ইতিহাস বলে যে এটি বিতর্ক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন থেকেও মুক্ত নয়।
সূত্র: সাহিত্য ইতিহাস (গুগল)। সংগ্রাহক- এফ.আর. ইমরান

