ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে রমজানের রোজা। আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জন্য এটি ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- “হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
রমজানের বিশেষ ফজিলতের মধ্যে রয়েছে শবে কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। হাদিস অনুযায়ী, জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যে রোজাদারদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে ‘রাইয়ান’ নামক দরজা, যা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করতে পারবেন।
বাংলা সাহিত্য বরাবরই ঋতুভিত্তিক ও ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব বহন করেছে। তবে অন্যান্য বিষয় যেমন ঋতু, প্রকৃতি কিংবা সামাজিকতা নিয়ে সাহিত্যচর্চা যেমন বিস্তৃত হয়েছে, তেমনভাবে রমজান ও সিয়াম নিয়ে সাহিত্যচর্চা তুলনামূলকভাবে কম। যদিও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, পল্লী কবি জসীম উদ্দিনসহ অনেক খ্যাতিমান কবি ও সাহিত্যিক তাঁদের রচনায় রমজানের পবিত্রতা, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন।
নজরুল ইসলামের কবিতায় মাহে রমজান এক বিপ্লবী সুরে প্রতিফলিত হয়েছে—
“মাহে রমজান এসেছে যখন আসিবে শবে কদর,
নামিবে রহমত এই ধূলির ধরার পর।
এই উপবাসী আত্মা, চিরকাল রোযা রাখিবে না-
আসে শুভ এফতার ক্ষণ।”
ফররুখ আহমদের কাব্যেও শবে কদরের মাহাত্ম্য উঠে এসেছে—
“এখনো সে পুণ্য রাত্রি নামে পৃথিবীতে,
কিন্তু প্রাণ এক অন্ধকার ছেড়ে অন্য এক আঁধারে হারায়।”
পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের কবিতায় তারাবির নামাজের আমেজ পাওয়া যায়—
“নামাজ পড়িতে যাইব মোল্লাবাড়িতে আজ,
মেনাজদ্দীন, কলিমদ্দীন, আয় তোরা করি সাজ।”
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদদের ব্যাখ্যাতেও এর তাৎপর্য সুস্পষ্ট। অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন, “রোজা কেবল দেহের উপবাস নয়, এটি আত্মার সংযম। কাম, ক্রোধ, লোভের নিয়ন্ত্রণই রোজার মূল শিক্ষা। রোজা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।”
রমজানের অন্যতম দিক হলো সিয়াম ও কিয়াম (তারাবি নামাজ)। এটি মুমিনের আত্মশুদ্ধির অন্যতম উপায়। কবি আজিজুর রহমান তাঁর রচনায় উল্লেখ করেন—
“রোজা রেখে করো অনুভব, ক্ষুধার কেমন তাপ,
দেহমনের সেই সাধনায়, পুড়িয়ে নে তোর পাপ।”
রমজানের মাহাত্ম্য নিয়ে সাহিত্যচর্চা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই অনুভূত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে এ নিয়ে আরও ব্যাপক আলোচনা ও গবেষণা হলে ইসলামী ভাবধারা আরও সুদৃঢ়ভাবে উপস্থাপিত হতে পারত। তবু, সীমিত পরিসরে হলেও রমজান নিয়ে কবিতা, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
রমজান শুধু ইবাদতের মাসই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সংযম ও সামাজিক সংহতির এক অনন্য নিদর্শন। তাই আমাদের উচিত এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো এবং সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনে আত্মনিয়োগ করা।

