বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান প্রতি বছর রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা রাখেন। দীর্ঘ সময় উপোস থাকার ফলে শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে, যা ধাপে ধাপে শরীরকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
১ম কয়েক দিন: শরীরের জন্য কঠিনতম পর্যায়
শেষবার খাবার গ্রহণের পর শরীরে থাকা গ্লুকোজ প্রথম আট ঘণ্টা পর্যন্ত শক্তির মূল উৎস হিসেবে কাজ করে। এরপর শরীর যকৃৎ ও মাংসপেশীতে সংরক্ষিত গ্লুকোজ ব্যবহার করতে শুরু করে। যখন গ্লুকোজের মজুদ শেষ হয়ে যায়, তখন শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য চর্বি পোড়ানো শুরু করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি কমায়। তবে এই সময় দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও ঝিমুনির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩য় থেকে ৭ম দিন: পানিশূন্যতার ঝুঁকি
কয়েক দিন পর শরীর রোজার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। শরীরে জমা থাকা চর্বি গলতে থাকে এবং তা শক্তিতে পরিণত হয়। তবে দীর্ঘসময় পানি না খাওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে গরমের সময়। এজন্য ইফতার ও সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি এবং শক্তিবর্ধক খাবার গ্রহণ করা জরুরি।

৮ম থেকে ১৫তম দিন: শরীরের অভ্যস্ত হয়ে ওঠা
দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শরীর রোজার নিয়মের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময় শরীর তার স্বাভাবিক কাজকর্মের পাশাপাশি নিজেকে সারিয়ে তোলার কাজে মনোযোগ দিতে পারে। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধেও সহায়ক।
১৬তম থেকে ৩০তম দিন: শরীরের ভারমুক্ত অনুভূতি
রমজানের শেষের দিকে শরীর পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং অভ্যন্তরীণ পরিশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায়, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর আরও শক্তিশালী অনুভূত হয়। তবে দীর্ঘসময় রোজা রাখলে শরীর শক্তির জন্য মাংসপেশী ব্যবহার করতে পারে, যা স্বাস্থ্যকর নয়।
রোজা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে যদি সঠিক নিয়মে খাওয়া হয়। তবে ওজন কমানোর জন্য একটানা দীর্ঘ সময় উপোস থাকার পরিবর্তে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত উপোস করা উচিত। রমজানের পর মাঝে মাঝে উপোস রাখা শরীরের জন্য ভালো হতে পারে, তবে তা অবশ্যই সুষম খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া উচিত।

