ভালোবাসা একটি বিমূর্ত অনুভূতি, যা কখনো সুখ এনে দেয়, কখনো বা কষ্টের সাগরে ডুবিয়ে ফেলে। জীবনের নানা পর্যায়ে আমরা নানা ধরনের ভালোবাসার সঙ্গী হই, তবে সবচেয়ে বড় ভালোবাসা হচ্ছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা, যা মুমিনের জীবনে চিরকাল স্থায়ী থাকে। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন যে, আপনি সত্যিকারেরভাবে রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন? এর উত্তর খোঁজা যাক।
আয়েশা (রা.)-এর এক স্মরণীয় বর্ণনায় বলা হয়েছে। একবার রাসুল (সা.) তার জন্য দোয়া করতে গিয়ে বলেছিলেন, আল্লাহ- আয়েশার অতীত ও ভবিষ্যতের গুনাহ মাফ করুন; যা সে গোপনে করেছে এবং যা প্রকাশ্যে করেছে সব। এই দোয়া শুনে আয়েশা (রা.) এতই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তার মাথা রাসুল (সা.)-এর গায় পড়েছিল। রাসুল (সা.) তাকে বলেন, তোমার জন্য যে দোয়া করেছি, তা কি তোমাকে আনন্দিত করেছে? তিনি আরো জানান, এই দোয়া আমি প্রতিটি নামাজে উম্মতের জন্য করি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮৩০)
রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার কিছু প্রতিফলিত আলামত বা নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো আমাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
১. তাঁর অনুকরণ করা-
আমরা সাধারণত আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্বদের অনুকরণ করি- চলচ্চিত্র তারকা, খেলোয়াড় বা অন্য সেলিব্রিটিদের। তবে রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে তার জীবনধারা ও সুন্নাহ অনুসরণ করা উচিত। এটি শুধু তার বিধান নয়, তার সুন্দর আচরণ ও চরিত্রকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করা। নিজের পরিবার, সহকর্মী, মুসলিম ও অমুসলিমদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করছি- তা একবার ভাবুন।
২. নবী জীবনী অধ্যয়ন করা-
যে কাউকে ভালোবাসি, তার সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী হই। রাসুল (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি দিক আমাদের জন্য শিক্ষা। তার দয়া, সহানুভূতি, নিষ্ঠা ও সহ্যের গল্প শুনে- আমরা তার পথ অনুসরণ করতে পারি। সিরাতে রাসুল অধ্যয়ন আমাদের ভালোবাসাকে আরও শক্তিশালী করবে।
৩. কোরআন পাঠ করা-
কোরআন হচ্ছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে বড় উপহার। তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে কোরআন পাঠ করা ও তার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝে জীবনে প্রয়োগ করা জরুরি। কোরআনকে হৃদয়ে ধারণ করে তার পথ অনুসরণ করা আমাদের আখিরাতের সফলতা নিশ্চিত করবে।
৪. দরুদ পড়া-
দরুদ পাঠের মাধ্যমে আমরা রাসুল (সা.)-এর জন্য শান্তি ও বরকত প্রার্থনা করি। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে ১০ গুণ বরকত ও রহমত প্রদান করবেন। প্রতিদিন অন্তত ১০ বার দরুদ পাঠ করা আমাদের রাসুল (সা.)-এর কাছে আরও কাছে নিয়ে যাবে।
৫. তিনি যা ভালোবাসতেন তা ভালোবাসা-
রাসুল (সা.)-এর প্রিয় অভ্যাসগুলো আমাদের জন্য একটি আদর্শ। তিনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন, সাদা পোশাক পরতেন এবং হাসিমুখে কথা বলতেন। তার সুন্নাহ অনুসরণ করাটা আমাদের দায়িত্ব, যেমনটি তিনি চেয়েছেন।
৬. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রার্থনা করা-
যে কাউকে ভালোবাসি, তাকে সব সময় স্মরণ করি। রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে তার সঙ্গে পরকালে মিলিত হওয়ার প্রার্থনা করা আমাদের অন্তরের কামনা হওয়া উচিত।
৭. সুন্নাহর প্রচার করা-
রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে তার জীবন, সুন্নাহ ও শিক্ষা অন্যদের জানানো ও তা অনুসরণে উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য। তার শিখানো পথে চলা শুধুমাত্র আমাদের জন্য নয়, সবার জন্য মঙ্গলকর।
রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা শুধু মুখের কথা নয়- এটি কর্মের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হয়। প্রতিটি পদক্ষেপে তার সুন্নাহ অনুসরণ করলেই তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকৃত হয়।

