রমজান মাসে নারীরা সিয়াম পালন ও অন্যান্য ইবাদত করার ক্ষেত্রে পুরুষদের মতোই সমান অধিকারী। আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন, “যদি কোনো বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ সৎকর্ম করে, তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৪) মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকভাবে আদায় করে, রমজানে রোজা রাখে, নিজের ইজ্জত রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।” (আবুদাউদ, ইবনে হিব্বান)
রমজান মাসে নারীরা রোজা পালনের পাশাপাশি তারাবীহ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ এবং অন্যান্য সুন্নত আমল পালন করতে পারবেন। ইসলাম নারীদের জন্য সিয়াম সাধনা ও ইবাদতের সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছে। এই সময়ে মায়েরা সন্তানকে দুধ পান করালেও রোজা বা অজু ভঙ্গ হবে না। একইভাবে কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হলেও রোজা ভঙ্গ হবে না, তবে অজু ভঙ্গ হবে।
রোজা শুধুমাত্র পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা ভঙ্গ হয়। রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাবের কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং এই রোজা পরে কাজা করতে হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না। গর্ভবতী নারীরা যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখতে পারবেন না, তবে পরে সেই রোজার কাজা আদায় করতে পারবেন।
ঋতুস্রাব চলাকালে নারীরা রোজা রাখতে পারবেন না, নামাজ পড়তে পারবেন না এবং কোরআন তিলাওয়াতও করতে পারবেন না। তবে অন্যান্য দোয়া, দরুদ, তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও ইস্তিগফার ইত্যাদি আমল করা যাবে। এই সময় নারীরা সাহরি ও ইফতারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন, রান্নাবান্নার কাজ করতে পারবেন, তবে কাবাঘর তাওয়াফ করা যাবে না। ঋতুস্রাব চলাকালীন নারীর স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয় না বা অজু-গোসল নষ্ট হয় না। এছাড়া রজোবতী নারীকে স্বামী-স্ত্রীসুলভ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে- যা হারাম।
যদি রোজা অবস্থায় মাসিক শুরু হয়, তবে ওই রোজাটি পরে কাজা আদায় করতে হবে, তবে সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজার মধ্যে যদি মাসিক চলে আসে, তবে সেই দিনও পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে কিন্তু এটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে এই রোজারও কাজা আদায় করতে হবে।
যদি কোনো নারীর মাসিক তিন দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি সময় থাকে অথবা নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার পর পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, তবে তাকে ‘ইস্তিহাজা’ বলা হয়। এই অবস্থায় নারীকে রোজা রাখতে এবং নামাজ পড়তে হবে। প্রসব পরবর্তী ৪০ দিনেও যদি রক্তপাত চলতে থাকে, তবে অজু-গোসল করে যথারীতি নামাজ ও রোজা পালন করতে হবে। এই অবস্থায় সব ধরনের ফরজ, সুন্নত ও নফল ইবাদত করা যাবে।
রোজা অবস্থায় কাউকে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে দেওয়ার মাধ্যমে রোজা ভাঙবে না। যারা রান্নাবান্না করেন, তারা প্রয়োজনে খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে পারবেন, তবে মুখে বা জিবে নিয়ে তা ফেলে দিতে হবে। তাছাড়া রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, ক্রিম, পাউডার বা সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। তবে পর্দা ও শরিয়তের বিধান যেন লঙ্ঘন না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
রমজান মাসে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান অধিকার রয়েছে। ইসলাম নারীদের প্রতি রমজান মাসের পূর্ণ মর্যাদা ও সুযোগ প্রদান করেছে, যাতে তারা যথাযথভাবে সিয়াম পালন করতে পারেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।

