আজ রোজ শুক্রবার। আজকের এই দিনে আমাদের ছাত্রজীনের জনপ্রিয় কবি জসীম উদ্দীনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনিই ছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দিন। ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকায় ৭৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর দিনেই তাকে ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ির আঙিনায় সমাহিত করা হয়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের জীবন ও সাহিত্য আজও বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে জাগ্রত রয়েছে।
আজকের এই বিশেষ দিনে, ফরিদপুর জেলা প্রশাসন এবং জসীম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। সকাল ১০টায় কবির কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।
জসীম উদ্দীনের জীবন ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং বৈচিত্র্যময়। তিনি ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর সদর উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহ পোষণ করতেন। ছাত্রজীবনে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা ‘কবর’ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এ কবিতার মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের কাছে এক পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন। তার আরেকটি জনপ্রিয় কবিতা ছিল ‘নিমন্ত্রণ’। যা তার জীবনদর্শন ও সমাজিক ভাবনা তুলে ধরেছে।
জসীম উদ্দীন শুধু একজন কবি নন, তিনি একজন সমাজ চিন্তকও ছিলেন। তার কবিতায় তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি, মানুষের দুঃখ-কষ্ট এবং সংগ্রাম তুলে ধরেছেন। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ তার অন্যতম বিখ্যাত কবিতা, যা গ্রামবাংলার মাটির শেকড় এবং মানুষের জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ জীবনের চিরন্তন সংগ্রাম এবং শাশ্বত সৌন্দর্যকে বর্ণনা করেছেন।
‘বেদের মেয়ে’ কবিতাটি জসীম উদ্দীনের গ্রামীণ প্রেমের একটি চিরন্তন চিত্র। কবিতায় তিনি গ্রামবাংলার একটি বেদে মেয়ে এবং তার প্রেমিকের দুরন্ত জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘মধুমালা’ ও ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’-এর মতো কবিতাগুলোর মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ প্রেমের, সম্পর্কের, সংগ্রামের গভীরতা তুলে ধরেছেন।
জসীম উদ্দীনের সাহিত্য ছিল অত্যন্ত সহজ, সরল ও মর্মস্পর্শী। তিনি বাংলার সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কথা বলেছেন এবং তাদের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা তার লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তার কবিতায় গ্রামের কষ্ট, কৃষকের মেহনত এবং প্রকৃতির রূপ ফুটে উঠেছে। তিনি মানুষের মনোজগতের গভীরে প্রবেশ করে তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছেন।
জসীম উদ্দীনের সাহিত্যিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার সমাজ পরিবর্তনের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি মেহনতি মানুষের জন্য, কৃষকদের জন্য, গরিব মানুষের জন্য কল্যাণকামী ছিলেন। তার সাহিত্য সমাজের অনগ্রসর অংশকে উৎসাহিত করার জন্যে ছিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
এছাড়া জসীম উদ্দীন তার জীবদ্দশায় একাধিক পুস্তক, নাটক ও গল্প রচনা করেছেন। যা বাঙালি সমাজের বাস্তব ছবি তুলে ধরে। তার লেখায় গ্রামীণ জীবন, কৃষকের জীবন, প্রেম, বিরহ, মানবিকতা ও সমাজের নানা দিককে ফুটিয়ে তুলেছেন।
তাঁর সাহিত্যে গ্রামবাংলার অমলিন সৌন্দর্য, বেদনা, আশা এবং স্বপ্ন ফুটে উঠেছে। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী শুধু একটি শোকের দিন নয়। এটি আমাদের সাহিত্যের এক মহান ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করার দিন। তিনি বাঙালির ইতিহাসে এক অনন্য অবস্থান অধিকারী। তার সাহিত্য আজও পাঠকদের হৃদয়ে জীবন্ত।

