ইসলামে জাকাত শুধু একটি আর্থিক অনুদান নয় বরং এটি পবিত্রতা, বিকাশ ও মানবিক সমৃদ্ধির প্রতীক। শরিয়ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের ওপর বছরের শেষে জাকাত দেওয়া ফরজ, যা সমাজে ধনসম্পদের সুষম বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কারা জাকাত দিতে বাধ্য?
একজন স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মুসলমান, যার কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বাইরে সোনা, রুপা, নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড, শেয়ার কিংবা ব্যবসায়িক মালপত্র রয়েছে এবং যার মোট সম্পদের মূল্য নির্ধারিত নেসাব পরিমাণে পৌঁছায়- তিনিই জাকাত প্রদানে বাধ্য।
এই সম্পদ একটানা এক বছর ধরে তার মালিকানায় থাকলে এবং সম্পূর্ণরূপে ঋণমুক্ত হলে- বছর শেষে ওই সম্পদের আড়াই শতাংশ হারে জাকাত দিতে হবে।
যেসব সম্পদে জাকাত ফরজ:
স্বর্ণ ও রুপা:
- স্বর্ণের নেসাব: সাড়ে ৭ তোলা বা ৪৭৮.৮৭ গ্রাম
- রুপার নেসাব: সাড়ে ৫২ তোলা বা ৬২১.৩৫ গ্রাম
উল্লেখ্য, স্বর্ণ-রুপা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে থাকলেও নেসাব পরিমাণ হলে জাকাত ফরজ। অলংকার, গয়না কিংবা উপহারের জন্য সংরক্ষিত থাকলেও এর ব্যতিক্রম নেই।
যদি স্বর্ণ বা রুপার মধ্যে একটি নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে দুটির সম্মিলিত মূল্যের ওপর হিসাব করে ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫% জাকাত দিতে হবে।
নগদ অর্থ:
- যদি কারও কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নগদ অর্থ থাকে এবং তার মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ হয়, তবে বছরের শেষে ওই টাকারও জাকাত দিতে হবে।
- এ ক্ষেত্রে রুপা মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়, কারণ এটি অপেক্ষাকৃত কম মূল্যমান সম্পদ, যা গরিবদের সহায়তা নিশ্চিত করে।
ব্যবসায়িক সম্পদ:
- ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা পণ্য ও সম্পদেরও জাকাত ফরজ, যদি তার মূল্য নেসাব পরিমাণ হয়। বছরের শেষে এই সম্পদের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে জাকাত আদায় করতে হয়।
সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড ও ডিপিএস:
- এই ধরনের আর্থিক দলিল বা বিনিয়োগেরও বাজারমূল্য অনুযায়ী জাকাত দিতে হবে, যদি তা নেসাব পরিমাণ হয়।
গবাদি পশু:
- শরিয়তে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে গবাদি পশুর ওপরও জাকাত ফরজ। তবে এসব শর্ত বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সচরাচর পূরণ হয় না।
জাকাত মালিকানাভেদে:
- স্বর্ণ-রুপার অলংকার স্ত্রীর নামে মালিকানা থাকলে, স্ত্রীর পক্ষ থেকে জাকাত দেওয়া বাধ্যতামূলক। স্বামী চাইলেই তা পরিশোধ করে দিতে পারেন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
- যদি অলংকার স্বামী ব্যবহার করতে দেন, কিন্তু মালিকানা তারই থাকে- তবে জাকাত দেওয়ার দায় স্বামীর।
- মালিকানা অস্পষ্ট থাকলে তা আগে নির্ধারণ করা প্রয়োজন এবং যাঁর মালিকানায় থাকবে, জাকাতও তারই ওপর ফরজ হবে।
একান্নবর্তী পরিবারে জাকাতের নিয়ম:
- যে পরিবারে একাধিক ভাইয়ের স্ত্রীদের স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার থাকে এবং তা নেসাব পরিমাণে পৌঁছায়, সেখানে প্রত্যেক নারী নিজ নিজ জাকাত দিতে বাধ্য। ভাইয়েরা সম্মিলিতভাবে তাদের স্ত্রীদের সম্মতির ভিত্তিতে জাকাত দিতে পারেন; তবে অনুমতি ছাড়া তা বৈধ নয়।
জমি-ফ্ল্যাটে জাকাত নয়, ব্যবসার জন্য হলে ব্যতিক্রম:
- জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা গাড়ির ওপর সাধারণত জাকাত আসে না। তবে যদি এগুলো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে রাখা হয়, সেক্ষেত্রে সেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্যের ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে।
জাকাত একটি ফরজ ইবাদত। মুসলমানদের উচিত নিজেদের সম্পদ যাচাই করে সঠিকভাবে জাকাত আদায় করা, যাতে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় শ্রেণি উপকৃত হয় এবং বৈষম্য হ্রাস পায়।
- সংকলক: এফ.আর. ইমরান

