রমজান- বছরের সবচেয়ে পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ মাস। রমজানের শেষ ১০ দিনকে বলা হয় “নাজাতের দশক” বা “মুক্তির দশক”। আর এই মাসের শেষ দশ দিন হলো ইবাদতের সর্বোচ্চ স্তর অর্জনের সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দশ দিনকে ইবাদতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন। হাদিসে এসেছে,
“রমজানের শেষ দশ দিনে তিনি রাত জেগে ইবাদত করতেন, পরিবারের সদস্যদের জাগাতেন এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিতেন।” (বুখারি, মুসলিম)
শেষ ১০ দিনের ফজিলত:
লাইলাতুল কদরের সন্ধান-
এই দশ দিনেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত- লাইলাতুল কদর। কোরআনে বলা হয়েছে,
“লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা আল-কদর: ৩)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুযোগ-
এই দশককে বলা হয় “নাজাতের দশক” জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ সময়।
নেক আমলের সোনালি সুযোগ-
রমজানের প্রথম ২০ দিনের চেয়ে এই শেষ দশ দিনেই বেশি ইবাদতের গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ এখানেই লুকিয়ে থাকে জান্নাতের দরজা খোলার চাবি।
গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ:
ইতিকাফ-
রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ সমাজে কেউ না করলেও গুনাহ হবে।
যারা সময় ও সুযোগ পান, তারা মসজিদে ইতিকাফ করে পুরোপুরি ইবাদতে মগ্ন থাকতে পারেন।
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান-
২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজান– বেজো রাতগুলোতে বেশি ইবাদত, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন-
“তোমরা লাইলাতুল কদর সন্ধান করো রমজানের শেষ দশকের বেজো রাতগুলোতে।” (বুখারি)
অধিক পরিমাণ দোয়া ও ইস্তেগফার-
রাসুল (সা.) এ সময় পড়তেন-
اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عني
“হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করাকে ভালোবাসো, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
কুরআন খতমের চেষ্টা-
যাদের এখনো কুরআন খতম হয়নি, তারা এই ১০ দিনে বাকি অংশ তিলাওয়াত করে শেষ করতে পারেন। এতে দুনিয়া ও আখেরাতের বরকত বাড়বে।
দান-সদকা-
লাইলাতুল কদরে একটি দানও হতে পারে হাজার মাসের দানের সমান। তাই এই দিনগুলোতে গোপনে ও খোলাখুলিভাবে দান করুন।
রাত জেগে ইবাদত-
বিশেষত বেজো রাতগুলোতে যতটা সম্ভব সময় নিয়ে নামাজ, তাসবিহ, দোয়া ও কুরআনে মন দিন। এটি রাসুল (সা.)-এর প্রিয় আমল ছিল।
রমজানের এই শেষ দশ দিন হলো আত্মশুদ্ধি ও আত্মসমর্পণের সময়। এই সময় নিজের গুনাহর জন্য কাঁদুন, তওবা করুন, আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিন। যেন ঈদের দিন আপনি প্রকৃতপক্ষে গুনাহমুক্ত এক নবজাতকের মতো পবিত্র জীবন নিয়ে নতুন সূচনার পথে পা রাখতে পারেন।
রমজানের শেষ দশ দিন এমন একটি বরকতময় সময়, যা ফিরে আসবে কিনা আমরা জানি না। তাই এই সময়টিকে অবহেলা নয় বরং প্রাণ খুলে ইবাদতে ব্যয় করাই মুমিনের কর্তব্য। প্রতিটি রাতকে লাইলাতুল কদর মনে করে কাটালে, অন্তত একটি রাতে নিশ্চিত সে বরকতের ভাগীদার হতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
- সংকলক: এফ.আ. ইমরান

